কেন্দ্র সরকারের একাধিক নীতির প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা দেশজোড়া ধর্মঘট আজ দিনভর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ও উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে পালিত হয়েছে। শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি, প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষ এই ধর্মঘটে অংশ নিয়েছেন, যা কেন্দ্র সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টিতে তাদের সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। পশ্চিমবঙ্গে ধর্মঘটের প্রভাব ছিল চোখে পড়ার মতো, যেখানে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে বাম ও কংগ্রেস সমর্থকদের সংঘর্ষে উত্তাপ ছড়ায়। বিশেষত ব্যাঙ্ক কর্মীরা এই ধর্মঘটে ব্যাপক সাড়া দিয়েছেন।
কলকাতায় রণক্ষেত্র, সৃজন ভট্টাচার্য সহ ১১ জনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ
রাজধানী কলকাতাতেও ধর্মঘটের আঁচ লেগেছে। ধর্মঘটের সমর্থনে রাস্তায় নেমে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান সিপিআইএমের ছাত্র নেতা সৃজন ভট্টাচার্য সহ একাধিক বামপন্থী কর্মী। কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন সিটু (CITU) জানিয়েছে, যাদবপুরে এসএফআই নেতা সৃজন ভট্টাচার্য সহ অনেককে ধর্মঘটের পক্ষে মিছিল থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিটু-র অভিযোগ, সৃজন সহ মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে ‘খুনের চেষ্টার’ মতো গুরুতর ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা রাজনৈতিক মহলে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
সিটু-র হুঁশিয়ারি: ‘রাজ্য সরকার ধর্মঘট ভাঙতে হামলা চালাচ্ছে’
সিটু-র রাজ্য সভাপতি অনাদি সাহু এবং সম্পাদক জিয়াউল আলম সহ শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এক যৌথ বিবৃতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “দেশের অন্য কোথাও কোনও রাজ্য সরকার এভাবে ধর্মঘট ভাঙতে হামলা চালায়নি।” তবে তাঁরা একই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “শ্রমিক কর্মচারীরা যেভাবে অংশ নিয়েছেন, আমরা আরও শক্তিশালী হয়েছি।” তাঁদের এই মন্তব্য রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং ভবিষ্যতে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের ইঙ্গিত দিয়েছে।
ত্রিপুরায় বনধের ব্যাপক প্রভাব: জনজীবন সম্পূর্ণ স্তব্ধ
পশ্চিমবঙ্গের থেকেও এই ধর্মঘটের বেশি প্রভাব পড়েছে বিজেপি শাসিত রাজ্য ত্রিপুরায়। সেখানে সিপিআইএম প্রধান বিরোধী দল হওয়ায় ধর্মঘটের সমর্থনে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। রাজধানী আগরতলা সহ ত্রিপুরা রাজ্যের সর্বত্র জনজীবন কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি সরকারের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
শ্রম কোড নিয়ে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি: অনাদি সাহুর কড়া আক্রমণ
দশটি কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনের তরফে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, আজকের ধর্মঘটের ব্যাপকতা প্রমাণ করেছে কেন্দ্র সরকার দেশে শ্রম কোড লাগু করতে চাইলে দেশ ফের অচল হবে। সিটু নেতা অনাদি সাহু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করে বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ধাপ্পা দিচ্ছেন এই বলে যে রাজ্যে শ্রম কোড লাগু হবে না। দেশে কোড লাগু হলে রাজ্যেও হবে।” তিনি আরও বলেন, “আর রাজ্যে যেভাবে শ্রম আইন ভেঙে শোষণ হচ্ছে তা অভাবনীয়।” তাঁর এই মন্তব্য শ্রম কোড নিয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলির অনমনীয় মনোভাবের ইঙ্গিত দেয়।
শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, আজকের ধর্মঘটে কয়লা শিল্পে ৪৪ শতাংশ, চটকল শিল্পে ৯০ শতাংশ, পাহাড়ের বাইরে চা শিল্পে ৬০ শতাংশ, গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চলে ৪৫ শতাংশ এবং বিড়ি শিল্পে ৬৫ শতাংশ শ্রমিক-কর্মচারী যোগ দিয়েছেন। এই পরিসংখ্যানগুলি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উপর শ্রমিক সংগঠনগুলির সম্মিলিত চাপকে প্রতিফলিত করছে।