মহানগরের বুকে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে, ‘তোলা’ না পাওয়ায় খোদ পুলিশের দ্বারাই ভাঙচুর করা হয়েছে নিউ আলিপুরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো প্রায় ৩০-৩৫টি ট্রাক। প্রতিটি ট্রাকের কাঁচ ভাঙা এবং চাকার হাওয়া খুলে দেওয়া হয়েছে। এই গুরুতর অভিযোগ পাওয়ার পর কলকাতা পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে চারজন সাব-ইনস্পেক্টরকে সাসপেন্ড করেছে। ঘটনাটি শহরজুড়ে ব্যাপক নিন্দার ঝড় তুলেছে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ: ৪ জন সাসপেন্ড
কলকাতা পুলিশের ডিসি সাউথ প্রিয়ব্রত রায় এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে জানান, “এই ঘটনায় আমরা অভ্যন্তরীণ তদন্ত করে প্রাথমিকভাবে চারজন সাব-ইনস্পেক্টরকে সাসপেন্ড করেছি। তাঁদের নাম বলতে চাই না। তদন্ত চলছে। এই ঘটনায় আর কার ভূমিকা ছিল, সেই বিষয়গুলিও আমরা ভালোভাবে খতিয়ে দেখছি।” পুলিশের এই দ্রুত পদক্ষেপ একদিকে যেমন ঘটনার গুরুত্বকে তুলে ধরছে, তেমনি অভিযোগের সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে।
মঙ্গলবার রাতের ঘটনা, বুধবার সকালে বিক্ষোভ
পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার রাতে এই ভাঙচুরের ঘটনাটি ঘটে। বুধবার সকালে ট্রাকচালকদের নজরে আসার পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। নিউ আলিপুরের ট্রাক ইউনিয়নের সদস্যরা নিজেদের ট্রাক রাস্তাতেই রেখে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পুলিশ এসে তাঁদের বিক্ষোভ তুলে নিতে বলে এবং দ্রুত তদন্তের আশ্বাস দেয়, এরপরই ট্রাকচালকরা অবরোধ তুলে নেন।
মালিকদের প্রশ্ন: ‘কেন ভাঙা হলো ট্রাক?’
আচমকা এমন ঘটনার কারণ বুঝে উঠতে পারছেন না ট্রাক মালিকরা। তাঁদের দাবি, বিগত ৪০ বছর ধরে এই এলাকায় তাঁদের একাধিক গাড়ি রাখা হয় এবং এতদিন পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো অসুবিধা জানানো হয়নি। তাঁরা বলছেন, যদি কোনো সমস্যা থাকত, তবে আগে জানালে ট্রাকগুলো অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া যেত। কিন্তু গাড়িগুলো ভাঙচুরের প্রয়োজন কেন পড়ল, এই প্রশ্নই তুলছেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ প্রায়শই তাঁদের থেকে ‘তোলা’ চায় এবং টাকা দিতে অস্বীকার করায় এই হামলা চালানো হয়েছে।
ফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সজল ঘোষ বলেন, “গত ৫০ বছর ধরে নিউ আলিপুরের যে জায়গাতে অশান্তি হয়েছে, সেখানে একটি সাইডিং রয়েছে এবং যেহেতু ওখানে কোনো পার্কিং নেই, তাই গত ৫০ বছর ধরে ওই রাস্তাতেই ট্রাকচালকরা গাড়ি রেখে যান। ট্রাকচালকরা তেমন শিক্ষিত নন, তাই তাঁরা মাঝে মধ্যে গাড়ি রেখে অন্যত্র চলে যান।” তিনি আরও যোগ করেন, “পুলিশ যে পণ্যবাহী গাড়ির উপরে তোলা তোলার মতো অত্যাচার করে সেটা নতুন নয়। তাই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এবং পরিবহণমন্ত্রীর কাছে আমাদের অনুরোধ যে, হয় ওখান থেকে সাইডিংটা সরিয়ে দিন, নয়তো সাইডিংয়ের ভেতরে আমাদের পণ্যবাহী গাড়ি রাখার একটা ব্যবস্থা করুন। তাহলে এই সমস্যার শেষ হতে পারে।”
এই ঘটনায় এলাকার বাসিন্দারাও হতবাক। তাঁরা জানান, রাতে নিয়মিত ট্রাক রাখা থাকে সেখানে, কিন্তু এমন ভাঙচুরের ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। পুরো বিষয়টি নিয়ে জনমনে ক্ষোভ বাড়ছে, এবং প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে তদন্তের দাবি উঠেছে।