দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখছে তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর রেলপথ প্রকল্প। দক্ষিণবঙ্গের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নব দিগন্তের সূচনা করতে চলেছে এই ৮২.৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ। বিশেষত হাওড়া, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়া জেলার মানুষের জন্য এটি সময় ও খরচ সাশ্রয়ের এক অন্যতম বিকল্প হয়ে উঠতে চলেছে।
প্রকল্পের অগ্রগতি:
এই প্রকল্পের অন্যতম প্রধান অগ্রগতি হল ভবাদিঘি অঞ্চলে ৬০০ মিটার দীর্ঘ একটি অত্যাধুনিক রেল ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হওয়া। এই ব্রিজটি প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও সুদৃঢ় করবে। তারকেশ্বর থেকে গোঘাট পর্যন্ত রেললাইন এবং কমারপুকুর স্টেশন নির্মাণ ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ হয়েছে। কমারপুকুর থেকে জয়রামবাটি পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এছাড়া, বিষ্ণুপুর থেকে জয়রামবাটি অংশে রেললাইনের কাজ ইতিমধ্যে CRS (Commission of Railway Safety) এর সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে, যা এই প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়নের ইঙ্গিত বহন করে।
জমি অধিগ্রহণ ও আইনি জটিলতার অবসান:
এই বহু প্রতীক্ষিত প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ধরে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতায় আটকে ছিল। তবে ২০২৪ সালের মার্চ মাসে কলকাতা হাইকোর্টের একটি যুগান্তকারী রায়ে সেই দীর্ঘদিনের আইনি জট কেটে যায়। রাজ্য সরকার এবং রেল মন্ত্রকের যৌথ উদ্যোগে প্রশাসনিক স্তরে সমস্যাগুলির দ্রুত সমাধান করা হয়, যার ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে নতুন গতি আসে।
সাধারণ মানুষের জন্য সুফল:
এই রেলপথ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে গ্রামীণ এলাকার মানুষজনও আধুনিক ট্রেন পরিষেবার সুবিধা পাবেন। এর ফলে যাত্রার সময় ও খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে। পাশাপাশি, রাজ্যের অভ্যন্তরীণ পরিবহন নেটওয়ার্ক আরও কার্যকর ও সুশৃঙ্খল হয়ে উঠবে। পর্যটন ও বাণিজ্য খাতেও এই প্রকল্প উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি শুধু দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগ ব্যবস্থাতেই নয়, সামগ্রিকভাবে রাজ্যের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বর্তমানে ভবাদিঘিতে রেল ব্রিজ তৈরির কাজ এবং কমারপুকুর থেকে জয়রামবাটি পর্যন্ত ট্র্যাক বসানোর কাজ পুরোদমে চলছে। আশা করা যায়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এই প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হবে এবং দক্ষিণবঙ্গের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।