নয়া নিয়োগের জট, আড়াই হাজার যোগ্য শিক্ষকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, ওবিসি ও নম্বরের বেড়াজালে আটকে হাইকোর্টে মামলা

একদিকে আদালতের নির্দেশ, অন্যদিকে নতুন নিয়োগ বিধির জট – এই দুইয়ের মাঝে পড়ে প্রায় আড়াই হাজার ‘যোগ্য’ চাকরিহারা শিক্ষকের ভবিষ্যৎ এখন ঘোর অনিশ্চয়তার মুখে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি হারানোর পর নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেতেও তাঁদের সামনে দেখা দিয়েছে একাধিক বাধা। এই সমস্যার সমাধান চেয়ে আজ কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের এজলাসে মামলা দায়ের করেছেন যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষকরা। এই মামলার শুনানি আগামিকাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

চাকরিহারা শিক্ষকদের নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে না পারার মূল কারণ দুটি: ওবিসি তালিকার জটিলতা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার নির্ধারিত নম্বরের শর্ত।

ওবিসি তালিকার জট:
মামলাকারীদের অনেকেই ২০১৬ সালের ওবিসি তালিকার অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে সেই তালিকা বাতিল হয়ে গেছে। রাজ্য সরকার নতুন ওবিসি তালিকা তৈরি করলেও, কলকাতা হাইকোর্ট ৩১ জুলাই পর্যন্ত তাতে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। এই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে, কিন্তু তার নিষ্পত্তি এখনও হয়নি। ফলে, বহু যোগ্য শিক্ষক ওবিসি সংরক্ষণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

যোগ্যতার নম্বরের বেড়াজাল:
২০১৬ সালের নিয়োগ বিধি অনুযায়ী, স্নাতক স্তরে ৪৫-৪৯ শতাংশ নম্বর থাকলেই আবেদন করা যেত। কিন্তু স্কুল সার্ভিস কমিশনের নতুন নিয়োগ বিধি অনুযায়ী, স্নাতক স্তরে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর থাকা বাধ্যতামূলক। এই নতুন নিয়ম বহু যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষককে আবেদন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছে, যদিও সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষক হিসাবে কাজ করার অনুমতি দিয়েছে এবং এই সময়ের মধ্যে পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

আদালতের নির্দেশের ক্রমবিন্যাস:
গত ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৬ সালের এসএসসি’র পুরো প্যানেল বাতিল হয়, যার ফলে ২৫ হাজার ৭৫২ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী চাকরি হারান। এরপর ১৭ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার বেঞ্চ ‘চিহ্নিত যোগ্য’ শিক্ষকদের চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দেন এবং ৩১ মে’র মধ্যে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করে ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশ দেন। গ্রুপ-সি ও গ্রুপ-ডি কর্মীরা সবাই চাকরি হারান।

শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মেনে ৩১ মে’র মধ্যে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করলেও, এরপর থেকেই এই বিজ্ঞপ্তির বিভিন্ন নির্দেশিকা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে এবং একের পর এক মামলা দায়ের হচ্ছে হাইকোর্টে।

গত সোমবার, ৭ জুলাই, বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য তাঁর এক নির্দেশে ‘দাগী’ বলে চিহ্নিতদের পরীক্ষায় বসতে পারবেন না বলে নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে, যতজন চিহ্নিত ‘অযোগ্য’ বা ‘দাগী’ আবেদন করেছেন, তাঁদের আবেদন বাতিলের নির্দেশও দিয়েছেন। এই নির্দেশের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে রাজ্য, স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং যোগ্য প্রার্থীরা বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করেছেন, যার শুনানি চলছে।

এদিকে, আগামী শুক্রবার বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের বেঞ্চে ওবিসি সংরক্ষণ সংক্রান্ত মামলার শুনানি রয়েছে। সব মিলিয়ে, আড়াই হাজার যোগ্য শিক্ষকের ভবিষ্যৎ এখন আদালতের সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভরশীল। তাঁদের আশা, জটিলতা পেরিয়ে তাঁরা দ্রুত নিজেদের যোগ্য সম্মান ফিরে পাবেন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy