বর্তমানে লিভারের রোগে আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রায় ১০০টিরও বেশি ধরনের লিভারের রোগ রয়েছে, যার কারণগুলোও ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। সংক্রমণ, অতিরিক্ত মদ্যপান, কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, স্থূলতা এমনকি ক্যানসারের মতো কারণেও লিভারের ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ে।
সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো, অনেক ক্ষেত্রেই লিভারের রোগ নীরবে বাড়ে, কোনো স্পষ্ট উপসর্গ ছাড়াই। যখন লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়, তখন হয়তো রোগটি অনেকটা ছড়িয়ে পড়েছে। আবার অনেকে প্রাথমিক লক্ষণগুলোকে সাধারণ সমস্যা ভেবে অবহেলা করেন। কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ আছে, যা দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
লিভারের সমস্যার ৯টি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কীকরণ লক্ষণ:
১. ত্বক বা চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া (জন্ডিস): এটি লিভারের সমস্যার সবচেয়ে পরিচিত লক্ষণ। রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে ত্বক ও চোখ হলুদ দেখায়। সুস্থ লিভার বিলিরুবিন পরিষ্কার করতে পারে না, ফলে এর মাত্রা বাড়তে থাকে।
২. দীর্ঘস্থায়ী চুলকানি: ত্বকে কোনো ফুসকুড়ি বা দাগ না থাকলেও যদি দীর্ঘক্ষণ ধরে চুলকানি অনুভব করেন, তবে তা লিভারের সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। এই চুলকানি এতটাই তীব্র হতে পারে যে ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটে।
৩. পেট ফুলে যাওয়া: লিভারে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হলে এর চারপাশের রক্তনালীতে চাপ বাড়ে। এর ফলে পেট থেকে তরল বেরিয়ে এসে পেটে জমতে শুরু করে, যা পেট ফোলা বা ‘অ্যাসাইটিস’-এর কারণ। এই লক্ষণকে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়।
৪. পা ও গোড়ালি ফুলে যাওয়া: লিভারের সমস্যার কারণে অনেকেরই পা ও গোড়ালিতে জল জমে ফুলে যায়। লবণ কম খাওয়া এবং সঠিক ঔষধের সাহায্যে এই ফোলা কমানো যেতে পারে, তবে মূল কারণ লিভারের রোগ নির্ণয় করা জরুরি।
৫. প্রস্রাবের রং গাঢ় এবং মলের রং ফ্যাকাশে হওয়া: লিভারের সমস্যা হলে প্রস্রাবের রং অতিরিক্ত গাঢ় হয়ে যায়, অনেকটা চায়ের মতো। অন্যদিকে, মলের রং ফ্যাকাশে বা ধূসর বর্ণের হতে পারে। এটি জন্ডিসেরও একটি লক্ষণ।
৬. দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি ও স্মৃতিভ্রম: লিভার সঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমতে শুরু করে। এই টক্সিনগুলো মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যার ফলে দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি এবং এমনকি হঠাৎ করে ভুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৭. অতিরিক্ত বমি বমি ভাব বা বমি: লিভারের অসুস্থতার কারণে শরীরে টক্সিনের মাত্রা বেড়ে গেলে বারবার বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে। গুরুতর লিভার ফেইলিওরের ক্ষেত্রে বমি বা মলের সঙ্গে রক্তও দেখা যেতে পারে।
৮. সহজে আঘাত লাগা বা রক্তপাত: লিভার ফেইলিওরের কারণে শরীরের বিভিন্ন স্থানে সহজে ক্ষত বা আঘাত লাগতে পারে। নাক দিয়ে রক্তপাতও হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতাও কমে যায়।
৯. ত্বকের নিচে মাকড়সার জালের মতো রক্তনালী: যদি আপনার ত্বকের নিচে মাকড়সার জালের মতো লালচে রক্তনালী (স্পাইডার অ্যাঞ্জিওমা) দেখতে পান, বিশেষ করে গাল, নাক, ঘাড় বা হাতের তালুতে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এটি গুরুতর লিভার সমস্যার একটি সুস্পষ্ট লক্ষণ।
এই লক্ষণগুলোর কোনোটি যদি আপনার মধ্যে দেখা দেয়, তবে বিলম্ব না করে অবিলম্বে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সময়মতো রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা জীবন বাঁচাতে পারে। সচেতনতাই লিভারের সুস্থতার প্রথম ধাপ।