আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো লিভার। এটি অসংখ্য অত্যাবশ্যকীয় কাজ সম্পাদন করে, যা আমাদের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু এই লিভারে যখন অতিরিক্ত চর্বি জমা হয়, তখন তাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ফ্যাটি লিভার। অনেকেই এই সমস্যাকে খুব সাধারণ বা মামুলি ভেবে থাকেন, যা একটি মারাত্মক ভুল ধারণা। কারণ, এই আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ সমস্যাটিই ধীরে ধীরে শরীরের জন্য এক বিরাট বিপদ ডেকে আনতে পারে।
ফ্যাটি লিভারের সমস্যা থেকে লিভার সিরোসিসের মতো প্রাণঘাতী রোগ হতে পারে। আর সময়মতো এর চিকিৎসা না করালে তা মৃত্যুর কারণও হতে পারে। তাই ফ্যাটি লিভারকে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়, বরং এর প্রাথমিক লক্ষণগুলো জেনে রাখা এবং গুরুত্ব দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আসুন জেনে নিই, ফ্যাটি লিভারের কিছু আগাম উপসর্গ যা আপনাকে সময় থাকতে সতর্ক করতে পারে:
ফ্যাটি লিভারের ৭টি প্রাথমিক সতর্কতা সংকেত
১. প্রস্রাবের রঙের অস্বাভাবিক পরিবর্তন: যদি দেখেন আপনার প্রস্রাবের রং স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি গাঢ় হলুদ, তাহলে এটি ফ্যাটি লিভারের প্রাথমিক উপসর্গ হতে পারে। লিভারের কার্যক্ষমতা ব্যাহত হলে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা প্রস্রাবের রঙকে প্রভাবিত করে।
২. অতিরিক্ত ক্লান্তি ও অবসাদ: অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠা, সারাদিন অতিরিক্ত ক্লান্ত অনুভব করা, অথবা বিনা কারণে অবসাদগ্রস্ত লাগা—এগুলো ফ্যাটি লিভার সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ। লিভার ঠিকমতো কাজ না করলে শরীরে শক্তি উৎপাদন ব্যাহত হয়।
৩. ত্বকের অস্বাভাবিকতা: ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় ত্বক অস্বাভাবিক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও, ত্বকে ছোপ ছোপ দাগ বা গলার কাছের ত্বকের স্বাভাবিক রঙ পরিবর্তিত হয়ে গাঢ় হতে পারে। এটি লিভারের সমস্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত।
৪. অকারণে পেটে ব্যথা: যদি পেট খারাপ না হওয়া সত্ত্বেও মাঝে মাঝেই পেটে ব্যথা অনুভব করেন, বিশেষ করে পেটের উপরের ডান দিকে বা মাঝখানে, তাহলে এটি ফ্যাটি লিভার সমস্যার একটি প্রাথমিক উপসর্গ হতে পারে।
৫. পেশী ক্ষয় ও শারীরিক পরিবর্তন: ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় শরীরের পেশী ক্ষয় হতে থাকে। এর সঙ্গে যদি হাতের শিরাগুলো অস্বাভাবিকভাবে জেগে ওঠে বা বেরিয়ে আসে, এবং চেহারায় হঠাৎ বয়স্ক ভাব লক্ষ্য করেন, তবে দ্রুত লিভার পরীক্ষা করিয়ে নিন। এটি ফ্যাটি লিভারের প্রাথমিক উপসর্গ হতে পারে।
৬. পেটের মেদ বৃদ্ধি (ভুঁড়ি): যদি দেখেন আপনার পেটের মেদ বা ভুঁড়ি ক্রমাগত বাড়তে শুরু করেছে, তাহলে এটি ফ্যাটি লিভারের একটি জোরালো ইঙ্গিত। পেটের চারপাশে অতিরিক্ত চর্বি জমার সঙ্গে লিভারে চর্বি জমার একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এই লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই লিভার পরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন।
৭. ঘন ঘন তৃষ্ণা ও ডিহাইড্রেশন: বেশিরভাগ লিভারের অসুখের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে ডিহাইড্রেশন, পেট খালি লাগা বা অস্বাভাবিক ঘন ঘন তৃষ্ণা পাওয়া অন্যতম। এই লক্ষণগুলো খেয়াল করলেই দ্রুত লিভার পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত।
মনে রাখবেন, ফ্যাটি লিভারকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। উপরের উপসর্গগুলোর যেকোনো একটি বা একাধিক যদি আপনার মধ্যে দেখা যায়, তবে কালবিলম্ব না করে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করান। সময়মতো রোগ নির্ণয় এবং সঠিক জীবনযাত্রার পরিবর্তন আপনাকে সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন দিতে পারে। আপনার লিভার সুস্থ মানে আপনি সুস্থ!