রাতের গভীরে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ পায়ের রগে তীব্র টান ধরা, অথবা ঘুম থেকে উঠে বা সকালে হাঁটা শুরু করতেই পায়ের শিরায় অসহ্য ব্যথা – এই অভিজ্ঞতা অনেকেরই হয়। কখনো আবার হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎই বেঁকে যায় পায়ের আঙুল। এই ধরনের পেশী বা রগে টান ধরা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, এর পেছনের কারণগুলো এবং তাৎক্ষণিক মুক্তির উপায় জানা থাকলে ভোগান্তি অনেকটাই কমানো সম্ভব।
কেন পায়ের রগে টান ধরে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পায়ের রগ বা পেশিতে টান ধরার প্রধান কারণগুলির মধ্যে অন্যতম হলো ডিহাইড্রেশন বা জলশূন্যতা। শরীরে জলের পরিমাণ কমে গেলে এই টান ধরার প্রবণতা বাড়ে। শীতকালে জল পানের পরিমাণ কমে যাওয়ায় এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। তবে, ডিহাইড্রেশন ছাড়াও আরও কিছু কারণে পায়ের রগে টান ধরতে পারে:
- খনিজ পদার্থের ঘাটতি: শরীরে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, এবং পটাশিয়ামের অভাব হলে পেশিতে টান ধরতে পারে।
- অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম: অতিরিক্ত ব্যায়াম, দীর্ঘক্ষণ হাঁটা বা দৌড়ানো, অথবা পায়ের পেশির বেশি ব্যবহার পেশিতে চাপ সৃষ্টি করে।
- ঠান্ডা আবহাওয়া: খুব ঠান্ডা আবহাওয়া বা ঠাণ্ডা পরিবেশে থাকার কারণে পেশী সংকুচিত হয়ে টান ধরতে পারে।
- গর্ভকালীন খনিজের অভাব: গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে শরীরে খনিজের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- ভুল দেহভঙ্গি: বেশিক্ষণ একভাবে বসে থাকা, শক্ত জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা, অথবা ঘুমের সময় ভুল দেহভঙ্গির কারণেও পায়ের রগে টান ধরতে পারে।
হঠাৎ পায়ের রগে টান ধরলে দ্রুত যা করবেন:
যখন হঠাৎ পায়ের রগে টান ধরে, তখন অসহ্য ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে কিছু তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
- ম্যাসাজ: হাত-পা-আঙুলের ক্র্যাম্প থেকে মুক্তি পেতে আক্রান্ত স্থান এবং এর চারপাশে আঙুলের চাপে আলতো করে ম্যাসাজ করুন। এমনভাবে ম্যাসাজ করতে হবে যাতে শক্ত হয়ে যাওয়া পেশী ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়। হালকা হাতে চেপে ধরে ম্যাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয়।
- আলতো স্ট্রেচিং: পায়ের ক্র্যাম্পের ক্ষেত্রে হালকা করে চাপ দিয়ে ধীরে ধীরে পেশীটিকে স্ট্রেচিং করুন। যেমন, যদি পায়ের পিছনের রগে টান ধরে, তাহলে পায়ের পাতা সামনের দিকে ঠেলে ধরে রাখুন। এই সময় অন্য কোনো কঠিন ব্যায়াম না করাই ভালো, কারণ এতে পেশির ওপর আরও চাপ পড়তে পারে।
- ঠান্ডা ও গরম সেঁক: একটি হট ব্যাগ বা গরম জলের বোতল টান ধরা জায়গায় ১০ সেকেন্ড রাখুন। এরপর বরফ বা বরফ সেঁকের ব্যাগ দিয়ে সেই জায়গায় ১০ সেকেন্ড সেঁক দিন। আবার ১০ সেকেন্ড পর হট ব্যাগ দিন। এভাবে ঠান্ডা ও গরম সেঁক দিলে পেশীর ব্যথা কমতে শুরু করবে এবং পেশী শিথিল হবে।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম: হঠাৎ পায়ে টান ধরলে শক্ত বা ভারী কোনো কাজ করবেন না। এতে টান ধরা জায়গায় আরও চাপ পড়তে পারে এবং ব্যথা বাড়তে পারে। তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন এবং পেশীকে স্বাভাবিক হতে দিন।
- পর্যাপ্ত জল পান: সারাদিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন। শরীরে জলের ভারসাম্য রক্ষা করতে ডাবের জল, লেবুর জল বা ওআরএস পান করতে পারেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জলের ঘাটতির জন্যই এই সমস্যা হয়, তাই জল পানের প্রতি মনোযোগ দেওয়া অপরিহার্য।
পায়ের রগে টান ধরা একটি অস্বস্তিকর সমস্যা হলেও, এর কারণ সম্পর্কে সচেতনতা এবং সঠিক সময়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এই ভোগান্তি অনেকটাই কমানো সম্ভব। যদি এই সমস্যা নিয়মিত হয় বা তীব্র আকার ধারণ করে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।