ডেঙ্গুর পরই নতুন আতঙ্ক, বর্ষার জ্বরের রেশ কাটতেই জিবিএস সিনড্রোমে আক্রান্ত বহু, সতর্ক করছেন চিকিৎসকরা

দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব যখন বেড়েই চলেছে, ঠিক তখনই আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং বর্ষার বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর, সর্দি, চোখে সংক্রমণের মতো সমস্যা এখন ঘরে ঘরে। এগুলি কিছু দিনের মধ্যেই সেরে গেলেও, অদ্ভুত এক স্নায়ুর রোগে কমবেশি সবাই আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এই নতুন আতঙ্কের নাম হলো ‘গিলান-বারে সিনড্রোম’ বা জিবিএস (Guillain-Barré Syndrome – GBS)।

জ্বর পরবর্তী পক্ষাঘাতের ঝুঁকি:

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, সাধারণ সংক্রমণজনিত জ্বর থেকে সুস্থ হওয়ার পরই অনেক মানুষ এই জিবিএস সিনড্রোমে আক্রান্ত হচ্ছেন। এই রোগের প্রধান লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর সারলেও হাতে-পায়ে তীব্র ব্যথা, ঝিঁঝি ধরা, অবশ হয়ে আসা, এমনকি পক্ষাঘাত পর্যন্ত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে রোগীদের মুখের এক পাশও পক্ষাঘাতে অবশ হয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসকরা সাধারণ মানুষকে এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলছেন।

জিবিএস সিনড্রোম কী?

হাভার্ড হেলথ-এর তথ্য অনুযায়ী, গিলান-বারে সিনড্রোম হলো একটি জটিল স্নায়ুরোগ, যেখানে শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ব্যবস্থা (Immune System) ভুলবশত পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্রের কোষগুলিকে আক্রমণ করে। এর ফলে স্নায়ুর ক্ষতি হয় এবং পেশী দুর্বল হয়ে পড়ে। এই রোগের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, তবে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা এবং নিয়মিত ফিজিয়োথেরাপি এই রোগের তীব্রতা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

লক্ষণ এবং এর গুরুত্ব:

যদিও জিবিএস একটি মরণব্যাধি নয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীরা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন, তবে ব্যক্তিবিশেষে এর তীব্রতা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাই এর লক্ষণগুলি সম্পর্কে সজাগ থাকা অত্যন্ত জরুরি:

  • সংবেদনশীলতার পরিবর্তন: হাতে-পায়ের আঙুলে বা পাতায় ঝিঁঝি ধরা, পিন ফোটার মতো অনুভূতি সব সময় সাধারণ নাও হতে পারে। এটি জিবিএসের একটি প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।
  • ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা: পায়ের পাতা অবশ হতে হতে ক্রমশ দেহের উপরের দিকও অসাড় হয়ে যাওয়ার ফলে হাঁটাচলায় তীব্র অসুবিধা হতে পারে। এই দুর্বলতা দ্রুত ছড়াতে পারে।
  • মুখের পক্ষাঘাত: মুখের একদিক ক্রমশ অসাড় হয়ে যাওয়ার ফলে কথা বলতে, খেতে অথবা হাসতে সমস্যা হতে পারে।
  • চোখের সমস্যা: এই রোগে আক্রান্ত হলে চোখের মণি স্থির হয়ে যেতে পারে অথবা চোখের নড়াচড়ায় সমস্যা হতে পারে।
  • স্বাভাবিক কার্যকলাপে বাধা: যেহেতু শরীরে শক্তি থাকে না, তাই মলমূত্র ত্যাগ করতেও সমস্যা হতে পারে।
  • স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা: অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন, রক্তের চাপ কমে যাওয়া, শ্বাসকষ্টের মতো গুরুতর সমস্যাও দেখা যেতে পারে। শ্বাসযন্ত্রের পেশী আক্রান্ত হলে জীবনহানির ঝুঁকি থাকে।

চিকিৎসকরা বারবার জোর দিচ্ছেন, উপরের এই লক্ষণগুলির মধ্যে যেকোনো একটি দেখা গেলেই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। সময়মতো রোগ নির্ণয় এবং সঠিক পরিচর্যা এই রোগের জটিলতা কমাতে এবং দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। ডেঙ্গু এবং সাধারণ ভাইরাল জ্বরের এই মরসুমে জিবিএস সিনড্রোম সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy