বর্তমান সময়ে শরীরের বাহ্যিক গঠন এবং ফিটনেস নিয়ে অনেকেই বেশ সচেতন। পেটে সামান্য মেদ বাড়লেই অনেকে চিন্তায় পড়ে যান এবং দ্রুত মেদ কমানোর জন্য বিভিন্ন ঔষধ সেবন করে হিতে বিপরীত ডেকে আনেন। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, হাতের কাছে থাকা কিছু সাধারণ খাবারই আপনার পেটের মেদ কমাতে দারুণ কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। এর জন্য শুধু আপনার দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে সামান্য পরিবর্তন আনা জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দেন, পেটের ভেতরে লিভার, অগ্ন্যাশয় (প্যাংক্রিয়াস), কিডনিসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ থাকে। পেটের মেদ বাড়লে এই অঙ্গগুলির উপরও চর্বির আস্তরণ জমার আশঙ্কা থাকে, যা ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরলসহ নানা বিপাকীয় রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই পেটের মেদ ঝরিয়ে সুস্থ জীবন পেতে আপনার খাদ্যতালিকায় অবশ্যই নিম্নলিখিত ৫টি খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন:
১. বিনস (কিডনি বিনস): মেদ কমাতে ফাইবারের জাদু ‘বিনস’ বলতে এখানে মূলত কিডনি বিনসের কথা বলা হচ্ছে। এই খাবারটি এখন বাজারে সহজলভ্য। এতে রয়েছে এমন কিছু বিশেষ ফাইবার যা ওজন কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। পেটের মেদ কমানোর ক্ষেত্রে এর জুড়ি মেলা ভার। এছাড়াও, বিনসে থাকা কিছু উপাদান শরীরে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং সার্বিকভাবে বডি ফ্যাট কমাতেও এটি সহায়ক। তাই নিয়মিত আপনার খাদ্যতালিকায় বিনস রাখার চেষ্টা করুন।
২. দই: গরমকালের সঙ্গী ও মেদ কমানোর হাতিয়ার গরমকালে দই শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে, তাই দইয়ের ঘোল বা লাচ্ছি পান করার প্রচলন রয়েছে। তবে পেটের মেদ কমাতেও দই হতে পারে আপনার শক্তিশালী হাতিয়ার। এক্ষেত্রে ফ্যাটলেস দুধের টকদই খাওয়া উচিত। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, ফ্যাটলেস দই খেলে দ্রুত ওজন ঝরে। তাই পেটের মেদ কমাতে এই দুগ্ধজাত খাবারের উপর ভরসা রাখতে পারেন।
৩. ব্রকোলি: ভিটামিন ও ফাইবারের ভান্ডার বর্তমানে স্বাস্থ্য সচেতন নাগরিকদের খাদ্যতালিকায় ব্রকোলি একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই সবজির রয়েছে অনেক গুণ। এটি ভিটামিন সি এবং ফাইবারের এক দারুণ উৎস। ব্রকোলি খেলে পেট দীর্ঘক্ষণ ভরা থাকে, ফলে ক্ষুধা কম লাগে এবং অতিরিক্ত খাওয়া এড়ানো যায়। এই কারণে ওজন এবং পেটের মেদ উভয়ই কমে। এই সবজি স্যালাড হিসেবে বা রান্না করেও খাওয়া যায়।
৪. অ্যাপেল সিডার ভিনেগার: ফ্যাট মেটাবলিজমের অনুঘটক অ্যাপেল সিডার ভিনেগার (Apple Cider Vinegar) বহু সমস্যার সমাধান করতে পারে। এর মধ্যে থাকা অ্যাসিটিক অ্যাসিড ফ্যাট মেটাবলিজম প্রক্রিয়া শুরু করে দেয়, যার ফলে দ্রুত ফ্যাট ঝরতে থাকে। তবে, সরাসরি না খেয়ে পাতলা করে (diluted) ভিনেগার পান করা উচিত। যেকোনো নতুন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের আগে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য।
৫. ওটস: স্বাস্থ্যকর এবং পেট ভরানোর শস্য এই দানাশস্যটি ফাইবার সমৃদ্ধ এবং এটি শরীরের বিভিন্ন উপকারে আসে। তাই পেটের মেদ কমাতে চাইলে অবশ্যই ওটস খাওয়া উচিত। এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভর্তি রাখে, ফলে বারবার ক্ষুধা পায় না। এছাড়াও, পেটের মেদ কমানোর পাশাপাশি ওটস রক্তে সুগার এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। তাই ওটস খেলে আপনি সব দিক থেকেই সুরক্ষিত থাকবেন।
এই খাবারগুলিকে আপনার দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে অন্তর্ভুক্ত করে আপনি পেটের মেদ কমাতে এবং একটি সুস্থ জীবন যাপন করতে পারবেন। তবে, মনে রাখবেন, যেকোনো খাদ্যতালিকাগত পরিবর্তনের আগে একজন পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সর্বদা শ্রেয়।