প্রেম থেকে পরিণয়, ভালোবাসার সম্পর্ক যখন বিয়ের দিকে মোড় নেয়, তখন তা কেবল দু’জন মানুষের মিলন থাকে না; দুটি পরিবারেরও এক হওয়া। কিন্তু সব সম্পর্কই মসৃণ পথে গড়ায় না। অনেক সময় পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক বা অন্য কোনো পারিপার্শ্বিক কারণে নিজের পছন্দের কথা মুখ ফুটে বলা যায় না, অথবা পরিবারকে রাজি করানো কঠিন হয়ে পড়ে। এতে ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে জীবন কাটানোর স্বপ্ন বিষাদের রঙে ঢেকে যায়।
তবে হাল ছাড়ার কিছু নেই! পরিবারকে পছন্দের মানুষকে বিয়ে করার ব্যাপারে রাজি করানোর জন্য কিছু কার্যকর কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই ৮টি কৌশল, যা আপনাকে আপনার ভালোবাসার মানুষকে পেতে সাহায্য করবে:
১. পরিবারের পছন্দের ধরন বুঝুন: আপনার বাবা-মা অথবা পরিবারের যিনি মূলত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তিনি আপনার জন্য কেমন ছেলে বা মেয়ে পছন্দ করতে পারেন তা বোঝার চেষ্টা করুন। আপনার পছন্দের মানুষটির মধ্যে সেই গুণগুলো যদি থাকে, তাহলে তা তুলে ধরুন। প্রয়োজনে আপনার পছন্দের মানুষটিকে কিছু বিষয়ে ‘প্রস্তুত’ করে নিতে পারেন, যাতে তারা পরিবারের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে।
২. মায়ের সমর্থন আদায় করুন: মায়ের সঙ্গে আপনার সম্পর্ককে আরও গভীর করুন। তিনিই সন্তানের কাছে সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। মায়ের কাছে আপনার ভালোবাসার কথা খুলে বলুন, এবং জানান যে আপনি এই মানুষটিকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে চান। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মা সন্তানের পাশে দাঁড়ান এবং পরিবারের অন্যদের বোঝাতে সাহায্য করেন।
৩. বাবার বন্ধুদের সাহায্য নিন: যদি আপনার বাবা সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, তাহলে তার বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তাদের ভালোভাবে বোঝান কেন এই পাত্র বা পাত্রী আপনার জন্য সেরা। মায়ের সমর্থন এবং বাবার বন্ধুদের বাইরের দিক থেকে বোঝানো – এই দুইয়ের সম্মিলিত প্রভাব আপনাকে অনেকটাই এগিয়ে দেবে।
৪. বড় ভাই বা ভাবিকে পাশে টানুন: পরিবারের কর্তা যদি বড় ভাই হন, তাহলে ভাবিকে রাজি করানো তুলনামূলক সহজ হতে পারে। ভাবির পছন্দ বুঝে তাকে দু’একটা উপহার দিন অথবা গৃহস্থালির কাজে তাকে সাহায্য করুন। তাকে খুশি করতে পারলে তিনি ভাইয়ের কাছে আপনার হয়ে সওয়াল করবেন এবং কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
৫. আর্থিক স্থিতিশীলতার গুরুত্ব: আপনার পছন্দের মানুষটিকে বলুন, যেকোনো উপায়ে একটি চাকরি জোগাড় করতে। এতে আপনার পরিবার এটিকে ভালোভাবে নেবে এবং বিয়ের পরবর্তী জীবনে আর্থিক সংস্থান নিয়ে তাদের চিন্তা কমবে। আর্থিক নিরাপত্তা পরিবারকে রাজি করানোর ক্ষেত্রে একটি বড় ইতিবাচক দিক।
৬. ‘পাগলামির’ আশ্রয় নিন (সাবধানে!): যদি উপরের কৌশলগুলোতে কাজ না হয়, তাহলে বাবা-মাকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য কিছুটা ‘পাগলামি’ শুরু করতে পারেন। যেমন, দেয়াল বা পিলারের সঙ্গে নিজের মাথায় আস্তে আস্তে আঘাত করার ভান করুন (তবে সতর্ক থাকবেন যাতে সত্যিই আঘাত না লাগে)। এমন ভান করুন যেন আপনি খুব জোরে আঘাত করছেন, যাতে তারা বুঝতে পারে যে আপনাকে আর কোনোভাবেই ফেরানো সম্ভব হবে না। তবে এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল, যা খুব সাবধানে প্রয়োগ করা উচিত।
৭. দেশান্তরী হওয়ার হুমকি: যদি এর পরেও পরিবার রাজি না হয়, তাহলে ‘দেশান্তরী’ হওয়ার হুমকি দিতে পারেন। সিরিয়াস হবেন না, তবে পরিবারকে জানান যে, এখানে আপনার বিয়ে না হলে আপনি দেশ ছেড়ে চলে যাবেন। এটি পরিবারের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করতে পারে।
৮. শেষ চেষ্টা এবং ঐক্যবদ্ধ পরিকল্পনা: এতকিছুর পরেও যদি পরিবার রাজি না হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনি একেবারে সাগরের তীরে দাঁড়িয়ে আছেন। তবে হাল ছাড়া যাবে না। এবার আপনাকে শেষ চেষ্টা করতে হবে। এই শেষ চেষ্টার আগে পছন্দের পাত্র-পাত্রীর সঙ্গে একবার দেখা করুন। কারণ এটিই হতে পারে শেষ সুযোগ। দু’জন মিলে শেষ চেষ্টার উপায় বের করুন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যান।
ভালোবাসার এই যুদ্ধ জেতার জন্য ধৈর্য এবং কৌশল অত্যন্ত জরুরি। এই টিপসগুলো আপনাকে আপনার স্বপ্নের জীবনসঙ্গীকে পেতে সাহায্য করতে পারে।