আধুনিক জীবনে মোবাইল ফোন এক অপরিহার্য সঙ্গী। এতটাই যে, অনেকে প্রাকৃতিক কাজ সারতে শৌচাগারে বসেও মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে চোখ না বুলালে যেন স্বস্তি পান না। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এবার এই অভ্যাসকে গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাদের সতর্কবার্তা: শৌচাগারে মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে প্রাণঘাতী রোগ!
সমীক্ষার চাঞ্চল্যকর তথ্য:
একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। দেখা গেছে, ৪১ শতাংশ অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা এবং প্রায় ৭৫ শতাংশ আমেরিকাবাসী টয়লেটে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। ভারতেও এই অভ্যাস কমবেশি প্রচলিত। এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে, শৌচাগারে মোবাইল ব্যবহারের প্রবণতা কতটা ব্যাপক।
কেন শৌচাগারে মোবাইল বিপজ্জনক?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শৌচাগার প্রায়শই ভেজা এবং স্যাঁতসেঁতে থাকে, যা ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বংশবৃদ্ধির জন্য আদর্শ পরিবেশ। এর পাশাপাশি, ঠিকভাবে হাত না ধোওয়া অথবা কমোডের পাশে ফোন রাখলে সালমোনেল্লা (Salmonella), ই কোলাই (E. coli), সিগেল্লা (Shigella) এবং ক্যামফাইলোব্যাকটরের (Campylobacter) মতো বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়া দ্রুত মোবাইলে ছড়িয়ে পড়ে।
মোবাইল ফোন অন থাকলে এবং ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে তার তাপমাত্রা এমনিতেই বেশি থাকে, যা ব্যাকটেরিয়াদের বৃদ্ধিতে আরও সাহায্য করে। গবেষকরা আরও বলছেন, মোবাইলের কভার সাধারণত রাবারের তৈরি হয়, যা বহু ক্ষতিকর ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার আঁতুরঘর। শৌচাগারের ফ্লাশ, কল বা দরজার লক ব্যবহারের পর সেই অপরিষ্কার হাতে যদি মোবাইলের স্ক্রিনে হাত দেওয়া হয়, তাহলে সেখানেও সালমোনেল্লার মতো ভয়ঙ্কর ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে, যা থেকে টাইফয়েডের মতো মারাত্মক রোগ হতে পারে।
চিকিৎসকদের সতর্কবার্তা:
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, মোবাইলে বাসা বাঁধা এই ক্ষতিকর ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া খাবারের সঙ্গে লালায় মিশে দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতি এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, ফোনের টাচস্ক্রিনে গ্যাস্ট্রো (Gastro) এবং স্ট্যাপ (Staph)-এর মতো ক্ষতিকর ভাইরাস জন্মাতে পারে, যা পেটের সমস্যা এবং ত্বকের সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
এই নতুন তথ্য আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাসের উপর এক নতুন করে আলোকপাত করেছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জোরালোভাবে পরামর্শ দিচ্ছেন, শৌচাগারে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে আরও সচেতন হন। সামান্য একটি অভ্যাসের পরিবর্তনই আপনাকে প্রাণঘাতী রোগ থেকে বাঁচাতে পারে।