ওজন কমানোর চেষ্টা যেমন অনেকের কাছেই জরুরি, তেমনই বহু মানুষ আছেন যারা কাঙ্ক্ষিত ওজন লাভের জন্য হন্যে হন। সুষম খাবারের অভাবে অনেকেই তাদের ঈপ্সিত ওজনে পৌঁছাতে পারেন না। উচ্চতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি স্বাস্থ্যকর ওজন পাওয়ার জন্য সঠিক খাবারের প্রতি মনোযোগ দেওয়া অপরিহার্য। ওজন বাড়ানোর জন্য অনেকেই বিভিন্ন অস্বাস্থ্যকর উপায় বেছে নেন, যার ফলে শরীরে দেখা দিতে পারে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। তবে চিন্তা নেই! আজ আমরা আলোচনা করব এমন ৭টি খাবারের কথা, যা খেলে কোনো রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই আপনার ওজন বাড়াতে সাহায্য করবে:
১. কিশমিশ:
ওজন বাড়ানোর জন্য কিশমিশ একটি অত্যন্ত কার্যকর খাবার। আঙুর ফল শুকিয়ে তৈরি এই মিষ্টি ড্রাই ফ্রুটটি হজম করাও বেশ সহজ। কিশমিশে রয়েছে ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, জিঙ্ক, লৌহ, ফ্লোরাইড, পটাশিয়াম, ফোলাট, নিয়াসিন, কোলিন, ভিটামিন বি-৬ এবং রিবোফ্লাভিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিগুণ। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস জলে কিছু কিশমিশ ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে উঠে খালি পেটে সেই জল পান করুন। এটি শরীরে বাড়তি শক্তি জোগানোর পাশাপাশি ওজন বৃদ্ধিতেও সহায়ক হবে।
২. খিচুড়ি:
সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর খাবার খিচুড়ি স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়াতে দারুণ কাজ করে। এতে থাকা কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিন শরীরের ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। খিচুড়িতে ব্যবহৃত ডালে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, ফসফরাস, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, খাদ্যআঁশ ও অ্যামাইনো অ্যাসিড বিদ্যমান। তাই স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়াতে চাইলে নিয়মিত খাদ্যতালিকায় খিচুড়ি যোগ করতে পারেন।
৩. আলু:
আলু আমাদের দৈনন্দিন রান্নার একটি অপরিহার্য অংশ। সেদ্ধ আলুতে আপনি পাবেন শর্করা, তন্তু, খনিজ লবণ, ভিটামিন ও উদ্ভিজ্জ প্রোটিন। প্রতিদিনের খাবারে আলু যোগ করলে স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়ানো সহজ হবে। প্রতিদিন দুটি করে সেদ্ধ আলু খেতে পারেন। তবে ভাজা আলু পরিহার করাই শ্রেয়।
৪. ডিম:
ডিম একটি সহজলভ্য, সুস্বাদু এবং অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। নানাভাবে খাওয়া যায় এই ডিম। এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, যা স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। ডিমের কুসুমে প্রচুর ক্যালোরি থাকে, যা ওজন বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ডিম অন্তর্ভুক্ত করা বুদ্ধিমানের কাজ।
৫. বাদাম:
বাদাম একটি পরিচিত এবং অত্যন্ত পুষ্টিকর শুকনো ফল। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি, ফাইবার, প্রোটিন এবং ভিটামিন ই রয়েছে। নিয়মিত বাদাম খেলে ওজন বৃদ্ধি পায়। তাই প্রতিদিন অন্তত এক মুঠো বাদাম (যেমন কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, কিশমিশ) আপনার খাদ্যতালিকায় রাখার চেষ্টা করুন।
৬. ভাত ও ভাতের মাড়:
আমাদের বেশিরভাগ মানুষেরই দিনের একবেলা হলেও ভাতের থালি থাকে। ভাতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভাতের পাশাপাশি ভাতের মাড়ও ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক। তবে ডায়াবেটিস বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৭. মাছ:
প্রতিদিনের খাবারে মাছ অন্তর্ভুক্ত করুন। এটি স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়াতে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। মাছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। এছাড়াও এতে অ্যামাইনো অ্যাসিড, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, পটাশিয়াম, ভিটামিন ‘এ’ ও ‘বি’-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বিদ্যমান, যা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
এই খাবারগুলো আপনার শরীরে কোনো রকম ক্ষতিকর প্রভাব ছাড়াই স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়াতে সাহায্য করবে। তবে একটি সুষম খাদ্যতালিকা এবং নিয়মিত জীবনযাপন বজায় রাখাটাও জরুরি। প্রয়োজনে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে পারেন।