ডিভোর্স মানেই কি জীবনের শেষ? ভালোবাসার পথ ফুরিয়ে যাওয়া? না, একেবারেই নয়। মতের মিল না হওয়ায় সম্পর্ক থেকে সরে আসাটা এক কঠিন সিদ্ধান্ত, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, আপনি নতুন করে আবারও প্রেমে পড়তে পারবেন না কিংবা বিয়ে করতে পারবেন না।
বিচ্ছেদ যেকোনো সম্পর্কে যেকোনো সময় আসতে পারে। প্রতিটি বিচ্ছেদই কষ্টদায়ক, তবে বিয়ের পর বিচ্ছেদ একটু বেশিই বেদনাদায়ক হয়। কারণ তখন সমাজ, সংসার, সন্তান—অনেক কিছু জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে। বিয়ের প্রথম দিন থেকে কেউ বিচ্ছেদের কথা ভাবেন না, বরং সবকিছু মেনে নিয়ে চলার চেষ্টা করেন। কিন্তু যদি মতের মিল না হয়, তবে বাধ্য হয়েই বেছে নিতে হয় ডিভোর্সের পথ। এই আইনি জটিলতা মানসিকভাবে মানুষকে অনেকটা বিধ্বস্ত করে দেয়। সেই সঙ্গে সন্তান থাকলে সমস্যার মাত্রা হয় আরও ভিন্ন।
প্রথমবারের তিক্ত অভিজ্ঞতার পর অনেকেই দ্বিতীয়বার বিয়ের পিঁড়িতে বসতে ভয় পান। ‘আবার যদি সেই একই সমস্যা হয়?’—এই পুরনো ভয় মনে থেকেই যায়। এছাড়াও ‘ডিভোর্সি’ তকমা লাগার পর সমাজের ভয়ে অনেকেই দ্বিতীয়বার বিয়ের কথা ভাবতে ভয় পান। কিন্তু জীবনে চলতে গেলে সঙ্গীর প্রয়োজন। মুখে যতই বলি না কেন, সারা জীবন একা থাকাটা কষ্টেরই। তবে কীভাবে এই সবকিছু সামলে উঠে আবারও দ্বিতীয়বার বিয়ের কথা ভাববেন? এই সময় পত্রিকার খবর অনুযায়ী রইলো কিছু টিপস।
ডিভোর্সের পর দ্বিতীয়বার বিয়ে: কেন এটি জীবনের নতুন সুযোগ?
১. ভালোবাসা কোনো অপরাধ নয়:
যে কোনো মানুষ যেকোনো সময় প্রেমে পড়তে পারেন, কাউকে তার ভালো লাগতেই পারে। ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে বলে তিনি আবার নতুন করে কাউকে ভালোবাসতে পারবেন না, এমনটা নয়। যদি মনে হয় আপনি নতুন করে কারো প্রেমে পড়েছেন এবং তার সঙ্গে মনের মিলও হচ্ছে, তাহলে অবশ্যই দ্বিতীয় সুযোগ নিন। সব সময় সব অভিজ্ঞতা খারাপ হয় না, বরং এটি হতে পারে আপনার জীবনে নতুন করে সুখ ফিরে আসার পথ।
২. নিজের চাওয়াতেই গুরুত্ব দিন, কোনো বাধ্যবাধকতা নয়:
এমন কোনো আইন নেই যে ডিভোর্সের পর আপনাকে বিয়ে করতেই হবে, নিজের মতো একা থাকা যাবে না। প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব স্বাধীনতা রয়েছে এবং তিনি নিজের মতো করে ভালো থাকতেই পারেন। কিন্তু একদম একা জীবন কাটানো যেকোনো মানুষের পক্ষেই কষ্টকর। একজন সঙ্গীর প্রয়োজন হয়, যিনি পাশে থেকে সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেবেন। এই কারণেই বিশেষজ্ঞরা ডিভোর্সের পর ফের বিয়ের কথা বলেন।
৩. একে অপরের প্রয়োজন পূরণে সক্ষম:
বিয়ের উদ্দেশ্যই হলো একসঙ্গে মিলেমিশে থাকা এবং একে অপরের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানো। যদিও কেউই কারো উপর নির্ভরশীল নন, তবুও প্রত্যেক মানুষের জীবনে কিছু চাহিদা থাকে। মানসিক, শারীরিক বা আবেগিক—এই চাহিদাগুলো পূরণের জন্য একজনের পাশে অবশ্যই আরেকজনের উপস্থিতি প্রয়োজন। এই প্রয়োজন পূরণের জন্যই দ্বিতীয়বার বিয়ের পরামর্শ দেওয়া হয়।
৪. অর্থনৈতিক নিরাপত্তা:
জীবনে বেঁচে থাকতে এখন প্রথম প্রয়োজন হলো অর্থ। ডিভোর্সের পর সারা জীবন একা কাটাতে গেলেও অর্থের প্রয়োজন। তেমনই প্রয়োজন অর্থনৈতিক নিরাপত্তার। ধরা যাক, আপনার প্রচুর অর্থ রয়েছে। সেই অর্থ কীভাবে রক্ষা করবেন বা পরবর্তীতে কী হবে, তা একার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া কিছুটা চাপের হতে পারে। এক্ষেত্রে একজন সঙ্গী থাকলে অবশ্যই সুবিধা হয়, যিনি আর্থিক পরিকল্পনায় সহযোগিতা করতে পারেন।
৫. নিজের কিছু চাহিদা ও অনুভূতির প্রকাশ:
ডিভোর্স নানা কারণে হতে পারে। বিয়ের এক মাসের মধ্যেও অনেকের ডিভোর্স হয়ে যায়। অনেকে দেখেন, তারা বিবাহিত দম্পতি হিসেবে থাকতে পারছেন না। এই পরিস্থিতি থেকে ডিভোর্স হয়। কিন্তু মানুষের জীবনে একটি চাহিদা থেকেই যায়—মানসিক এবং শারীরিক উভয়ই। কখনো কখনো নিজের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করার মতোও একজন মানুষের প্রয়োজন হয়, যার কাছে সব কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। এই গভীর মানসিক সংযোগের জন্যই ডিভোর্সের পর দ্বিতীয়বার বিয়ের কথা বলা হয়।
সমাজ বা অতীতের ভয়কে পেছনে ফেলে, নিজের মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতার জন্য দ্বিতীয়বার বিয়ের কথা ভাবাটা কোনো ভুল নয়। এটি হতে পারে আপনার জীবনে নতুন করে আনন্দ, শান্তি এবং ভালোবাসার সূচনা।