একটা সময় ধারণা করা হতো, চুল পাকার সমস্যা কেবল বয়স বাড়ার সঙ্গেই জড়িত। কিন্তু বর্তমান সময়ে অল্পবয়সী তরুণ-তরুণীদের মধ্যেও এই সমস্যা প্রকট। এখন এটি বেশ স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবেই ধরা হয়। দু-একটি চুল পাকলে হয়তো সমস্যা নেই, কিন্তু একসঙ্গে সব চুল পেকে গেলে অনেকেই দুশ্চিন্তায় পড়েন এবং বাধ্য হয়ে কেমিক্যালযুক্ত হেয়ার কালার ব্যবহার করেন, যা চুলের আরও বেশি ক্ষতি করতে পারে।
আপনার যদি অল্প বয়সে চুল পাকার এই সমস্যা ঘটে থাকে, তবে এর কারণগুলো জেনে নেওয়া জরুরি। কারণ জানা থাকলে সমাধান খুঁজে পাওয়া সহজ হয়, এবং কেমিক্যালযুক্ত হেয়ার কালার ব্যবহারের প্রবণতাও কমে। চুল পাকার এই সমস্যার পেছনে কী কী কারণ থাকতে পারে, চলুন জেনে নেওয়া যাক:
অকালে চুল পাকার ৫টি প্রধান কারণ:
১. বংশগত কারণ (Genetics):
অল্প বয়সে চুল পাকার অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে বংশগত। যদি আপনার পরিবারের সদস্যদের (বাবা, মা, দাদা, দাদি, নানা, নানি) অল্প বয়সে চুল পাকার ইতিহাস থাকে, তবে আপনার ক্ষেত্রেও এটি ঘটার সম্ভাবনা বেশি। এক্ষেত্রে এই সমস্যা প্রতিরোধ করার উপায় নেই, তবে আপনি প্রাকৃতিক উপায়ে চুল কালো করার চেষ্টা করতে পারেন।
২. কিছু অসুখের কারণে (Underlying Health Issues):
আপনার চুল অকালে পেকে যাওয়ার কারণ হতে পারে নানা ধরনের অসুস্থতা। কোষ্ঠকাঠিন্য, অ্যানিমিয়া (রক্তাল্পতা) এবং থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের সমস্যা (যেমন হাইপারথাইরয়েডিজম) ইত্যাদি কারণে চুল পেকে যেতে পারে। যারা দীর্ঘ সময় ধরে হাইপারথাইরয়েডিজমের মতো রোগে ভুগছেন, তাদের চুল কম বয়সেই পেকে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। তাই এসব অসুখ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা করানো জরুরি।
৩. কেমিক্যাল এবং সূর্যের তাপের প্রভাব (Chemicals & Sun Exposure):
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপনি যদি দিনের বেশিরভাগ সময় সরাসরি রোদে কাটান, তবে আপনার চুল অল্প বয়সেই পেকে যেতে পারে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি চুলের মেলানিনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই রোদে থাকতে হলে যতটা সম্ভব চুল ঢেকে রাখুন বা টুপি ব্যবহার করুন। এছাড়াও, মাত্রাতিরিক্ত কেমিক্যালযুক্ত কসমেটিক্স এবং হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করলেও চুল অল্প বয়সেই পেকে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
৪. মানসিক চাপ (Stress):
মানসিক চাপ বা স্ট্রেস অকালে চুল পাকার অন্যতম কারণ। যখন আমরা মানসিক চাপে থাকি, তখন শরীরের ভেতরে কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে। এর প্রভাবে ভিটামিন বি-এর মাত্রা কমতে থাকে, যা চুলের স্বাস্থ্য এবং মেলানিন উৎপাদনে প্রভাব ফেলে। ফলস্বরূপ ধীরে ধীরে চুল পাকতে শুরু করে এবং শরীরের ওপরও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
৫. মেলানিনের ঘাটতি (Melanin Deficiency):
আমাদের চুলের ফলিকলের চারপাশে ‘মেলানোসাইটিস’ নামক একটি গ্রন্থি থাকে, যা ‘মেলানিন’ উৎপাদন করে। আমাদের চুল হলো কেরাটিন নামক এক ধরনের প্রোটিনের সমষ্টি। চুলের বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মেলানোসাইটিস কর্টেক্সে মেলানিন ঢুকিয়ে দেয়, যা চুলকে তার নির্দিষ্ট রঙ দেয়। যদি কেরাটিন মেলানিন ছাড়া থাকে, তাহলে দেখতে হলদেটে বা ধূসর লাগে। তাই মেলানিন উৎপাদন কমে গেলে তা চুল পাকার প্রধান কারণ হতে পারে।
অল্প বয়সে চুল পাকার সমস্যায় ভুগলে কেমিক্যালযুক্ত হেয়ার কালার ব্যবহার না করে, এর পেছনের কারণগুলো চিহ্নিত করুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং প্রাকৃতিক উপায়ে চুলের যত্ন নিন। মনে রাখবেন, সুস্থ জীবনযাপন এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখাও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরি।