দিনের পর দিন কম ঘুম? রাতের পর রাত জেগে থাকা? যদি আপনার উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে সাবধান! কারণ, আপনি নিজের অজান্তেই নিজেকে এক ভয়াবহ মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুস্থ শরীরের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন অন্তত ৬ ঘণ্টা গভীর ঘুম প্রয়োজন হলেও, বর্তমানের ব্যস্ততা, কাজের চাপ, এবং ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে। কিন্তু এই অনিদ্রা যে কেবল ক্লান্তি বাড়ায় না, বরং একাধিক প্রাণঘাতী রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তা কি জানেন?
ঘুমের অভাব যে কতটা মারাত্মক হতে পারে, তা ভাবলেও শিউরে উঠতে হয়। চলুন জেনে নিই, অনিদ্রা কীভাবে আপনার জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে এবং কোন ৭টি ভয়াবহ রোগ ডেকে আনছে:
১. মৃত্যুঝুঁকি বহুগুণ বৃদ্ধি: ব্রিটিশ গবেষণার চাঞ্চল্যকর তথ্য
ব্রিটেনের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য—অনিদ্রা মৃত্যুঝুঁকি অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। গবেষকরা বলছেন, যাদের পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব আছে, তাদের মৃত্যুর হার অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। এমনকি যারা অনিয়মিত ঘুমান, তাদের ক্ষেত্রেও এটি ঘটতে পারে। ২০০৭ সালে প্রকাশিত এক সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, যারা রাতে ৫-৭ ঘণ্টারও কম ঘুমান, তাদের মৃত্যু ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে দ্বিগুণ। বিশেষ করে, ঘুমের অভাব কার্ডিওভাসকুলার (হৃদপিণ্ড ও রক্তনালি সংক্রান্ত) রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি দ্বিগুণ করে দেয়।
২. যৌন জীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব:
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে আপনার যৌন জীবনেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা অনেক বেশি দেখা যায়। যারা দেরি করে ঘুমাতে যান ও পর্যাপ্ত ঘুম থেকে বঞ্চিত হন, তাদের শরীরে ‘টেস্টোস্টেরন’ নামক যৌন হরমোনের মাত্রা কমে যেতে পারে। এই হরমোনের মাত্রা কমে গেলে স্বাভাবিকভাবেই যৌন মিলনের আগ্রহও কমে যায়, যা সম্পর্কের ওপরও প্রভাব ফেলে।
৩. মানসিক অবসাদের চক্র:
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মানসিক অবসাদও বেড়ে যায়। রাত জাগার সঙ্গে মানসিক অবসাদের মধ্যে একটি চক্রাকার সম্পর্ক আছে; অর্থাৎ, অবসাদ যেমন ঘুম কেড়ে নেয়, তেমনই কম ঘুম অবসাদ বাড়ায়। ২০০৫ সালের একটি সমীক্ষা বলছে, উদ্বেগ বা মানসিক অবসাদে আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষই গড়ে ৬ ঘণ্টার কম ঘুমান।
৪. স্মৃতিশক্তি হ্রাস ও ভুলে যাওয়ার সমস্যা:
মস্তিষ্কের ‘নিওকর্টেক্স’ ও ‘হিপ্পোক্যাম্পাস’ নামক দু’টি অঞ্চলের সহায়তায় অস্থায়ী স্মৃতি স্থায়ী স্মৃতিতে রূপান্তরিত হয়। এই প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে গেলে প্রয়োজন নিবিড় ও পর্যাপ্ত ঘুম। কিন্তু পর্যাপ্ত ঘুম না হলে এই প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না। ফলে দৈনন্দিন জীবনে ভুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়, যা আপনার কর্মক্ষমতা এবং জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৫. দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি:
অনিদ্রা কেবল নিজের একটি সমস্যা নয়, এটি যেন অন্যান্য বিপজ্জনক দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যার প্রবেশদ্বার। যারা অনিদ্রায় ভুগছেন, তাদের একইসঙ্গে অন্য কোনো গুরুতর রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।
৬. ডায়াবেটিস ও স্ট্রোকের বাড়াবাড়ি:
অনিদ্রা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়, এবং যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের ক্ষেত্রে রোগটিকে আরও জটিল করে তোলে। এছাড়াও, স্ট্রোকের ঝুঁকিও অনিদ্রার কারণে অনেক বেড়ে যায়।
৭. হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ:
অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপের মতো কার্ডিওভাসকুলার রোগগুলো অনিদ্রার কারণে অনেকটাই বেড়ে যায়। আপনার হার্টকে সুস্থ রাখতে চাইলে পর্যাপ্ত ঘুমকে কোনোভাবেই অবহেলা করা চলবে না।
ঘুমকে কখনোই বিলাসিতা মনে করবেন না, এটি আপনার মৌলিক স্বাস্থ্য চাহিদা। তাই সবারই ঘুমের বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। একটি স্বাস্থ্যকর জীবন পেতে হলে প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। আপনার একটি ভালো রাতের ঘুম আপনাকে বহু রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।