বিবাহবিচ্ছেদ—এক তিক্ত অভিজ্ঞতা, যা শুধু একটি সম্পর্ককেই ছিন্ন করে না, সমাজের চোখে ব্যক্তিকেও ভিন্নভাবে চিহ্নিত করে। ডিভোর্স মানেই জীবনের পথ শেষ হয়ে যাওয়া নয়, ভালোবাসার ইতি টানা নয়। কিন্তু সমাজের ভয়, পুরনো তিক্ত অভিজ্ঞতা আর ‘ডিভোর্সি’ তকমা লেগে থাকার কারণে অনেকেই দ্বিতীয়বার বিয়ের কথা ভাবতেও ভয় পান, যদিও জীবনের পথে একজন সঙ্গীর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না।
বিচ্ছেদ যে কোনো সম্পর্কেই আসতে পারে, আর বিবাহবিচ্ছেদ নিঃসন্দেহে সবচেয়ে কষ্টদায়ক। সমাজ, সংসার, সন্তান—সবকিছুই এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। প্রথম দিন থেকে কেউ বিচ্ছেদের কথা ভেবে সম্পর্কে জড়ায় না। সকলেই মানিয়ে চলার চেষ্টা করেন, কিন্তু যখন মতের মিলের রেশটুকুও থাকে না, তখনই বাধ্য হয়ে বেছে নিতে হয় ডিভোর্সের পথ। আইনি জটিলতা যেমন মানুষকে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করে, তেমনই সন্তান থাকলে সমস্যা অন্য মাত্রা নেয়। প্রথমবারের তিক্ত অভিজ্ঞতার পর অনেকেই তাই দ্বিতীয়বার বিয়ের পিঁড়িতে বসতে দ্বিধা করেন। ‘যদি আবার একই রকম হয়?’ – এই ভয় মনে গেঁথে থাকে। কিন্তু জীবন তো থেমে থাকে না। এই ‘এই সময়’ পত্রিকার খবরে উঠে আসা কিছু টিপস ও বিশ্লেষণ সাহায্য করবে কীভাবে এই ভয় কাটিয়ে উঠে আবারও নতুন করে বিয়ের কথা ভাবা যায়।
ভালোবাসা কোনো অপরাধ নয়: দ্বিতীয় সুযোগ নিন!
যে কোনো মানুষ যে কোনো সময় নতুন করে প্রেমে পড়তে পারেন। ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে মানেই তিনি আর কাউকে ভালোবাসতে পারবেন না, এমনটা নয়। যদি আপনার মনে হয় নতুন করে আপনি কারোর প্রেমে পড়েছেন, তার সঙ্গে আপনার মনের মিল হচ্ছে, তবে অবশ্যই এই দ্বিতীয় সুযোগটি গ্রহণ করুন। মনে রাখবেন, সবসময় সব অভিজ্ঞতা খারাপ হয় না, বরং নতুন সম্পর্ক নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসে।
নিজের চাওয়াকে গুরুত্ব দিন, বাধ্যবাধকতা নয়:
ডিভোর্সের পর বিয়ে করতেই হবে, এমন কোনো আইন নেই। প্রত্যেক মানুষের নিজের মতো করে বাঁচার স্বাধীনতা আছে। অনেকেই একা থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কিন্তু একদম একা জীবন কাটানো বেশিরভাগ মানুষের পক্ষেই কষ্টকর। একজন সঙ্গীর প্রয়োজন হয়—মানসিক আশ্রয়, ভাগ করে নেওয়ার মতো একজন মানুষ। আর এই কারণেই বিশেষজ্ঞরা ডিভোর্সের পর ফের বিয়ের কথা বলেন, এটি কোনো বাধ্যবাধকতা নয়, বরং জীবনের এক স্বাভাবিক চাহিদা।
একে অপরের প্রয়োজন পূরণে সক্ষম হওয়া:
বিয়ের উদ্দেশ্যই হলো একসঙ্গে মিলেমিশে থাকা, সুখে-দুঃখে একে অপরের পাশে দাঁড়ানো। যদিও কেউ কারোর উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল নয়, তবুও প্রত্যেক মানুষের জীবনে একটা চাহিদা থাকে—মানসিক, আবেগিক, এমনকি শারীরিকও। আর সেই চাহিদা পূরণের জন্য একজন নির্ভরযোগ্য সঙ্গীর উপস্থিতি অপরিহার্য। এই পারস্পরিক প্রয়োজন পূরণের জন্যই দ্বিতীয়বার বিয়ের পরামর্শ দেওয়া হয়।
আর্থিক নিরাপত্তা: জীবনের বড় ভরসা:
জীবনে বেঁচে থাকতে অর্থের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। ডিভোর্সের পর সারা জীবন একা কাটাতে গেলেও অর্থের প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন অর্থনৈতিক নিরাপত্তার। ধরা যাক, আপনার প্রচুর অর্থ রয়েছে, কিন্তু সেই অর্থ কীভাবে রক্ষা করবেন বা পরবর্তীতে কী হবে, তা একার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া বা সামলানো একটু কঠিন। এক্ষেত্রে একজন বিশ্বাসী সঙ্গী থাকলে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে অবশ্যই সুবিধা হয়। পারস্পরিক সহযোগিতা এখানে এক বড় ভূমিকা রাখে।
নিজের কিছু চাহিদা: মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা:
ডিভোর্স নানা কারণে হতে পারে। বিয়ের এক মাসের মধ্যেও অনেকে বুঝতে পারেন যে তারা বিবাহিত দম্পতি হিসেবে আর থাকতে পারছেন না। এই অভিজ্ঞতা যতই তিক্ত হোক, মানুষের জীবনে কিছু মৌলিক চাহিদা থেকেই যায়—মানসিক ও শারীরিক উভয়ই। কখনও কখনও নিজের অনুভূতিগুলো মন খুলে প্রকাশ করার মতো একজন মানুষেরও প্রয়োজন হয়। ডিভোর্স আপনাকে সেই চাহিদাগুলো থেকে বঞ্চিত করে না। জীবনের এই অসম্পূর্ণতা পূরণ করতে এবং নতুন করে মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা ফিরে পেতে দ্বিতীয়বার বিয়ের গুরুত্ব অপরিসীম।
ডিভোর্স মানে জীবনের পরিসমাপ্তি নয়, বরং এটি একটি নতুন শুরুর সুযোগ। সাহস করে সমাজের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে নিজের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যতের পথ বেছে নিন। ভালোবাসার দ্বিতীয় সুযোগ দিতে দ্বিধা করবেন না।