অনেকেরই রাতে ঘুম আসে না, আবার কারও কারও ক্ষেত্রে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলেও মাঝরাতে হঠাৎই ভাঙছে তন্দ্রা। অদ্ভুতভাবে, এই ঘুম ভাঙার সময়টা প্রায়শই একটি নির্দিষ্ট ছকে বাঁধা! এমনটা কি শুধু অনিদ্রা, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে আপনার শরীর ও মনের গভীর কোনো বার্তা? বিশেষজ্ঞরা কিন্তু এই বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে দেখতে বলছেন।
ঘুম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি আপনার নিয়মিত একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম ভেঙে যায়, তবে এটি মোটেও স্বাভাবিক লক্ষণ নয়। এটি আপনার শরীর বা মনের গভীরে কোনো রোগ বাসা বেঁধেছে কিনা, সে বিষয়ে সতর্ক সংকেত হতে পারে। আসুন, জেনে নিই কোন সময় ঘুম ভাঙলে তার কী অর্থ হতে পারে এবং কীভাবে এর মোকাবিলা করবেন।
সময় অনুসারে শরীরের বার্তা ও প্রতিকার:
-
রাত ১১টা থেকে রাত ১টা: পিত্তথলির বার্তা ও মানসিক হতাশা যদি রাত ১১টা থেকে ১টার মধ্যে আপনার ঘুম ভেঙে যায়, তবে এটি পিত্তথলির সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। সাধারণত মানসিকভাবে হতাশ থাকলে এই সময়ে ঘুম ভাঙে। এই অনিদ্রা কাটাতে শিখুন ক্ষমা করতে এবং নিজেকে নিঃশর্তভাবে ভালোবাসতে। নিজেকে ইতিবাচক ভাবনায় ভরিয়ে তুললে উপকার পাবেন।
-
রাত ১টা থেকে ভোর ৩টা: যকৃতের সংকেত ও ক্রোধ রাত ১টা থেকে ভোর ৩টার মধ্যে ঘুম ভাঙা মানে আপনার যকৃতের উপর চাপ পড়ছে। সাধারণত যারা অল্পতেই রেগে যান এবং নিজেদের রাগের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন না, তাদের এই সময়ে ঘুম ভেঙে যায়। ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস ঠান্ডা জল পান করুন এবং নিজের আবেগের উপর নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করুন। ধ্যান বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
-
ভোর ৩টা থেকে সকাল ৫টা: ফুসফুসের সতর্কতা ও গভীর অবসাদ এই সময়টিকে ‘ব্রহ্ম মুহূর্ত’ বলা হলেও, যদি আচমকা আপনার ঘুম ভেঙে যায়, তবে তা ফুসফুসের সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। আবার এই সময়ে মনে গভীর অবসাদ আসার প্রবণতাও বেশি থাকে। তাই ঘুম ভাঙলে প্রথমেই বিছানায় বসে দীর্ঘ শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন করুন। ধ্যানের মাধ্যমে মনে আত্মবিশ্বাস ও ভবিষ্যতের প্রতি আশাবাদ আনুন। মনকে শান্ত রাখার চেষ্টা করুন।
-
সকাল ৫টা থেকে সকাল ৭টা: দ্বিধা ও গতে বাঁধা জীবন সকালে ৫টা থেকে ৭টার মধ্যে ঘুম ভাঙার অর্থ আপনার মনে অনেক দ্বিধা কাজ করছে এবং আপনি গতে বাঁধা জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। মনে রাখবেন, ভোরবেলার এই সময়টা দৈনন্দিন কার্যাবলীর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ঘুম ভাঙার পর অলসতা ঝেড়ে ফেলে নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। প্রয়োজনে স্বাস্থ্যকর প্রাতরাশ সারুন। এতে প্রাতঃকৃত্য ভালো হবে এবং সারাদিন শরীর ও মন দুইই সতেজ থাকবে। নতুন কিছু করার পরিকল্পনা করুন।
আপনার শরীর নিরন্তর আপনার সঙ্গে কথা বলে। মাঝরাতে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম ভাঙা সেই কথারই একটি অংশ। এই সূক্ষ্ম সংকেতগুলি চিনতে পারলে আপনি নিজের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে পারবেন। তবে, যদি সমস্যা গুরুতর মনে হয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে দ্বিধা করবেন না।