পেশির ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা যা দৈনন্দিন জীবনে বহু মানুষকে ভোগায়। ভারী কিছু তুলতে গিয়ে, দীর্ঘক্ষণ একই জায়গায় বসে থাকা, বা রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ হাঁটার কারণে এই ব্যথা হতে পারে। তবে, অনেক সময় এই কারণগুলো ছাড়াই হঠাৎ পেশিতে টান ধরতে পারে এবং তীব্র ব্যথা শুরু হতে পারে, যা দীর্ঘ সময় ধরে বজায় থাকতে পারে।
মাংসপেশিতে ব্যথার মূল কারণগুলি কী?
১. অতিরিক্ত শারীরিক চাপ: দীর্ঘক্ষণ হাঁটা, এক জায়গায় বসে কাজ করা, গাড়ি চালানো, বা কম্পিউটারে বসে অনেকক্ষণ কাজ করলে কাঁধ, ঘাড় ও পিঠের মাংসপেশিতে টান ধরতে পারে।
২. জলশূন্যতা: শরীরে জলের অভাব হলে মাংসপেশিতে ব্যথা হতে পারে। ডিহাইড্রেশন পেশিগুলোর সঠিক কার্যকারিতায় বাধা সৃষ্টি করে।
৩. অপর্যাপ্ত ওয়ার্মআপ: ব্যায়াম, খেলাধুলা বা যে কোনো শারীরিক কসরতের আগে পর্যাপ্ত ওয়ার্মআপ না করলে পেশিতে টান বা ব্যথা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
৪. পেশি ক্লান্তিতে আকস্মিক নড়াচড়া: পেশি ক্লান্ত থাকাবস্থায় আকস্মিক নড়াচড়া করলে বা ভুল ভঙ্গিতে কাজ করলে ব্যথা হতে পারে।
৫. ভারী জিনিস তোলা: হঠাৎ ভারী কিছু তুলতে গেলে মাংসপেশিতে টান লেগে ব্যথা হওয়া খুবই সাধারণ ঘটনা।
৬. মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা: মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তা অনেক সময় পেশিগুলোতে টান সৃষ্টি করে এবং ব্যথার কারণ হতে পারে।
৭. ইলেক্ট্রোলাইটের অভাব: শরীরে সোডিয়াম, পটাশিয়ামের মতো খনিজ পদার্থের অভাব হলে মাংসপেশিতে ব্যথা হতে পারে।
হঠাৎ পেশিতে ব্যথা হলে কী করবেন?
হঠাৎ মাংসপেশিতে ব্যথা হলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তাৎক্ষণিক আরাম পেতে ব্যথার জায়গায় বরফ লাগানো সবচেয়ে কার্যকর। পিঠে, ঘাড়ে বা কোমরে ব্যথা হলে সেখানে ঠান্ডা জলের বোতল চেপে ধরে রাখলেও উপকার পাওয়া যায়।
ফিটনেস বিশেষজ্ঞের দেওয়া ৪টি কার্যকরী ব্যায়াম:
ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায় পেশির ব্যথা দূর করার জন্য চারটি সহজ ব্যায়ামের কথা বলেছেন, যা সাময়িক আরাম এবং নিয়মিত অনুশীলনে দীর্ঘমেয়াদী উপশম দিতে পারে:
১. ফিগার ফোর হিপ স্ট্রেচ:
* অনেকক্ষণ চেয়ারে বসে কাজ করার পর কোমরে টান লাগলে এই ব্যায়ামটি কার্যকর। হাঁটুর ওপর এক পা তুলে বসুন, যাতে পা ইংরেজি ‘৪’ অক্ষরের মতো দেখায়। এরপর শরীর সামনের দিকে ঝোঁকান। হিপের অংশে টান অনুভব করবেন। এই অবস্থায় ১০ সেকেন্ড থাকুন। পা পাল্টে পাল্টে তিন-চার বার এই ব্যায়ামটি করুন। নিয়মিত এই ব্যায়াম করলে কোমরে টান ধরা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
২. হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ:
* দাঁড়িয়ে থাকাবস্থায় একটি পা চেয়ারে তুলে দিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকলে হ্যামস্ট্রিংয়ে টান ধরবে। চেয়ারে বসেও এটি করা যায়। একটি পা মাটিতে রেখে অন্য পা সোজা করে সামনের দিকে টান করে শরীর ঝোঁকাতে হবে। পা শূন্যে না রেখে অন্য চেয়ারেও তুলে রাখা যায়।
৩. চেয়ার সাপোর্ট শোল্ডার ফ্লেক্সন:
* ঘাড় বা পিঠের মাংসপেশিতে ব্যথা হলে এই ব্যায়ামটি করুন। দাঁড়িয়ে থাকাবস্থায় সামনে কোনো চেয়ার বা গ্রিল থাকলে, দু’হাত সোজা করে সেটি ধরুন। এরপর পা সোজা রেখে সামনের দিকে ঝুঁকুন। এটি করলেই পিঠের অংশের পেশিতে টান পড়বে। নিয়মিত করার ফলে পিঠ ও ঘাড়ে ব্যথা কমে।
৪. ওয়াল সাপোর্টেড কাফ স্ট্রেচ:
* হাত দু’টি সোজা করে দেওয়াল ধরুন, যেন দেয়ালে পুশ করার মতো জোর দিচ্ছেন। এর সঙ্গে হাঁটু ভাঁজ করে সামনের দিকে একটি পা এগিয়ে রাখুন। অপর পা তিন ফুট মতো পেছন দিকে নিয়ে হাঁটু সোজা করে টানটান রাখুন। পেছনের পায়ের গোড়ালি যেন মাটিতে চেপে থাকে। এভাবে কিছুক্ষণ থাকলে কাফ মাংসপেশিতে টান পড়বে। এটি নিয়মিত করলে মাংসপেশির ব্যথা কমবে।
পেশির ব্যথা যদিও সাধারণ, তবে এর কারণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে জানা জরুরি। প্রয়োজন অনুযায়ী এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে সুস্থ ও সক্রিয় থাকুন। যদি ব্যথা তীব্র হয় বা দীর্ঘক্ষণ ধরে থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।