সুরের দুনিয়ায় এক পরিচিত এবং প্রতিভাবান নাম সমিধ মুখোপাধ্যায়। গায়ক, গীতিকার এবং সুরকার হিসেবে তিনি বাংলা ও হিন্দি উভয় ইন্ডাস্ট্রিতেই দীর্ঘকাল ধরে কাজ করে চলেছেন। তাঁর সৃষ্টিতে রয়েছে ‘মাচো মুস্তানা’, ‘লাভেরিয়া’, ‘ক্রান্তি’, ‘জোশ’, ‘দুই পৃথিবী’, ‘সেদিন দেখা হয়েছিল’, ‘100% লাভ’, ‘ওম শান্তি’, ‘মজনু’, ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে’ -এর মতো একাধিক বাংলা ও হিন্দি ছবির জনপ্রিয় গান। তাঁর প্রথম মিউজিক অ্যালবাম ‘আমার ব্লু সানগ্লাস’-এর সাতটি ভিন্ন ধারার গান সমিধ নিজেই লিখেছেন, সুর করেছেন এবং গেয়েছেন। তাঁর সঙ্গীত পরিচালনায় গান গেয়েছেন শ্রেয়া ঘোষাল, সুনিধি চৌহান, কুনাল গাঞ্জাওয়ালা-সহ আরও অনেক প্রখ্যাত শিল্পী। বাংলা ছবি ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে’ থেকে তাঁর লেখা গান ‘কোকা কোলা’র জন্য তিনি টেলি-সিনে অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছেন।
এইবার সমিধ মুখোপাধ্যায় এক নতুন মাইলফলক ছুঁলেন। দীর্ঘ বছর পর গানের জগতে ফিরলেন ২০০৫ সালের ‘ফেম গুরুকুল’-এর বিজয়ী রূপরেখা বন্দ্যোপাধ্যায়, সমিধের সুরে গাইলেন একটি হিন্দি গান। রূপরেখা শ্রোতাদের কাছে হিন্দি গানের মাধ্যমেই ফিরতে চেয়েছিলেন, এবং তার জন্য সবার আগে সমিধ মুখোপাধ্যায়ের কাছেই যান।
সমিধের ভাবনা রূপরেখার ‘তুম’ গান নিয়ে
সমিধ রূপরেখার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে বলেন, “রূপরেখার সঙ্গে আগেও কাজ করেছি। যেমন সৎ, তেমনি প্রতিভা ওর। একইসঙ্গে ভীষণ সিম্পল। একদিন আর্জি নিয়ে আসে যে একটা কামব্যাক গান করবে। আর সেটা আমাকে কম্পোজ করতে হবে। গানটা হতে হবে হিন্দিতে।”
নিজের কাজের নীতি সম্পর্কে সমিধ জানান, “সাধারণত আমি কারও জন্য সিঙ্গেলস গান বানাই না। গান আমার অঙ্গ। সেটা বিক্রি করার জন্য না। কোনো ইউনিক কারণ না হলে আমি কারও জন্য গান বানাই না। কোনো প্রোডিউসার বা ডিরেক্টরের জন্য বানাই না। আমি ছবির জন্য বানাই। কেন না মানুষের কাছে পৌঁছনোর রাস্তা হল ছবি। কখনও নিজের কথা নিজে বলব বলে নিজের জন্য গান বানাই। রূপরেখার এই ‘তুম’ গানটার জন্য আমাদের অনেক পরিশ্রম আছে। অনেক গ্রুমিং, ওয়ার্কশপ করেছে রূপরেখা। রেকর্ডের আগে একটা বড় জার্নি ছিল। খুব তৃপ্ত আমরা। রূপরেখা ২০০ শতাংশ দিয়েছে।”
মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির পরিবর্তন ও শিল্পীর দায়িত্ব
মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির পরিবর্তন নিয়ে সমিধ মুখোপাধ্যায় বলেন, “পরিবর্তন রোজ আসে সব ক্ষেত্রে। তা সে ঋতু হোক বা জেনারেশন। ভালো মন্দ সবই থাকে সেই পরিবর্তনের মধ্যে। আমার মতে পরিবর্তন হয় ভালোর জন্য। যাতে শ্রোতার ভালো লাগে। গান হল একটা মাধ্যম। আর আমাদের বাংলা অনেক ভালো গান ডিজার্ভ করে।” তিনি আরও যোগ করেন, “প্রায়ই একটা কথা শুনতে হয়, আগের মতো গান কেন হয় না? গানটা আসলাম আর গেয়ে দিয়ে চলে গেলাম তা নয়। বড় সাধনার জিনিস সেটা।”
মানুষের চাহিদা এবং শিল্পীর দায়িত্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মানুষ কী চাইছে সেটাও বুঝতে হবে। আর সেটা বুঝতেন আর ডি বর্মন, এস ডি বর্মন, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়দের মতো সঙ্গীতজ্ঞরা। ওঁরা জানতেন শ্রোতা কী চায়। শ্রোতা আসলে স্টুডেন্টের মতো। আমাদের দায়িত্ব তাদের কাছে আমরা কী তুলে দেব। তা হলেই ভালো গান আসবে আগের মতো।”
সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয়তা শিল্পীকে গানের সুযোগ পেতে কতটা সাহায্য করে, এই প্রশ্নের উত্তরে সমিধ বলেন, “সাময়িক। বেশিদিন সেটা দিয়ে কাজ হয় না। একটা কথাই বলব, অনেকের অনেক ভিডিও ভাইরাল হয়। সবারই যোগ্যতা আছে তেমনটা নয়।” এআই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “অনেক বছর ধরেই আছে। শিল্পীরাও আছে। যখন কম্পিউটার এলো আমরা ভেবেছিলাম আমাদের কাজ চলে যাবে। গেল কি? এআই ক্রিয়েট করে। একটা আত্মার মধ্যে যে সত্য থাকে তা এআই-এর মধ্যে থাকে না। এআই ভালোবাসতে পারে না। ভালোবাসা ক্রিয়েট করতে পারে। কোনো কিছুর ‘মতো’ হবে। আসলটা হবে না।”