মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে কিডনি অন্যতম। শরীরের যাবতীয় দূষিত পদার্থ ছেঁকে বের করে দেওয়া থেকে শুরু করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তবে বিভিন্ন কারণে এই অতি প্রয়োজনীয় অঙ্গটি বিকল হয়ে যেতে পারে। উদ্বেগের বিষয় হলো, কিডনি রোগ খুব নীরবে শরীরের ক্ষতি করে। জটিল পরিস্থিতি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এর লক্ষণগুলো সাধারণত ভালোভাবে প্রকাশও পায় না। তাই কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো আগে থেকেই জেনে রাখা জরুরি। সেই সঙ্গে জানা দরকার এর সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে।
কাদের কিডনি রোগের ঝুঁকি বেশি?
কিছু বিশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থা এবং অভ্যাসের কারণে কিছু মানুষের কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বেশি থাকে। এর মধ্যে অন্যতম হলো অনিয়ন্ত্রিত ও দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ। এছাড়াও, কিডনির প্রদাহ (যার কারণে প্রস্রাবের সঙ্গে আমিষ নিঃসৃত হয়) অথবা মূত্রপ্রবাহে বাধা সৃষ্টিকারী কোনো সমস্যা থাকলে কিডনির রোগ হতে পারে। জন্মগত কিছু ত্রুটির কারণেও এই রোগ দেখা দিতে পারে।
একজন সুস্থ ব্যক্তিও হঠাৎ করে প্রচণ্ড বমি বা পাতলা পায়খানায় আক্রান্ত হলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, বিশেষ করে যদি তিনি বমি বা পায়খানার মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া জল ও লবণের সঠিক প্রতিস্থাপন না করেন। প্রায়শই যারা ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করেন, তাদেরও কিডনির সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অতিরিক্ত আমিষ জাতীয় খাবার গ্রহণের কারণেও কিডনির উপর চাপ পড়ে এবং তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
শরীর থেকে অতিরিক্ত প্রোটিন বেরিয়ে যাওয়ার কারণে কিডনিতে প্রোটিন চলে যায়। প্রোটিন শরীরে পেশি তৈরি ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই পরিস্থিতিতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে রোগীর পায়ে জল জমতে পারে এবং রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেতে পারে।
জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার ডা. হাসিনাতুল জান্নাত এ বিষয়ে বলেন, ‘অ্যালবুমিন একটি অপরিহার্য প্রোটিন উপাদান, যা টিস্যু বা কলাগুলোর স্বাস্থ্যকে বজায় রাখে। এটি রক্তক্ষরণ প্রতিরোধ করে এবং শরীরের মধ্যে তরল, রক্ত ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ টিস্যুর স্বাস্থ্যকে বজায় রাখার জন্য সঞ্চালিত হয়। অনেকেই শুধু শরীর ফোলাকে কিডনি রোগ বা কিডনি নষ্ট হওয়া মনে করেন। তবে কিডনি নষ্ট হওয়ার আরও কিছু লক্ষণ রয়েছে।’
কিডনির রোগের চিকিৎসা সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী হয়ে থাকে। তবে আশার কথা হলো, চিকিৎসায় ৩০-৫০ শতাংশ রোগী ভালো জীবনযাপন করতে পারেন। অন্যদিকে, যারা চিকিৎসা গ্রহণ করেন না, তাদের কিডনি সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।
কিডনি নষ্ট হয়েছে কি না বোঝার উপায়:
কিডনির স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানতে এবং রোগ নির্ণয় করতে নিয়মিত ফলোআপ করানো এবং কিছু লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ উল্লেখ করা হলো:
কিডনি নষ্ট হয়েছে কি না তা জানতে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফলোআপ করাতে হবে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
পায়ের দিকে লক্ষ্য রাখুন। পা ফুলে যাচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করুন।
প্রস্রাবের অভ্যাসের পরিবর্তন লক্ষ্য করুন। প্রস্রাবে সমস্যা বা জ্বালাপোড়া অনুভব করছেন কি না অথবা প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাচ্ছে কি না, তা খেয়াল রাখুন।
খাবারে অরুচি, বমি ভাব অথবা বার বার বমি হওয়া কিডনি রোগের একটি লক্ষণ হতে পারে।
আকস্মিক ওজন কমে যাওয়া এবং অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপও কিডনি রোগের কারণ হতে পারে।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ইনসুলিনের চাহিদা কমে যাওয়াও কিডনি রোগের পরবর্তী ধাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
প্রাথমিকভাবে বায়োপসি ছাড়াই ইউরিন আরএমই (Urine RME) টেস্টের মাধ্যমে কিডনির স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এছাড়াও, আলট্রাসনোগ্রামও একটি উপযোগী পরীক্ষা। এই টেস্টগুলোর ফলাফল যদি স্বাভাবিক থাকে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাহলে প্রাথমিকভাবে কিডনি ভালো আছে বলে ধরে নেওয়া যায়।
তবে মনে রাখতে হবে, কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমেই কিডনি রোগ মোকাবেলা করা সম্ভব।