পিরিয়ডের সাইকেলে সমস্যা হওয়া নারীদের জন্য একটি পরিচিত বিষয়। প্রায়শই দেখা যায়, কোনো মাসে পিরিয়ড নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শুরু হয়ে যায়, আবার কোনো মাসে সময় পেরিয়ে গেলেও তার দেখা মেলে না। অনিয়মিত পিরিয়ড নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তা করেন, তবে মনে রাখতে হবে শারীরিক, মানসিক এবং পরিবেশগত বিভিন্ন কারণে পিরিয়ড তার নির্দিষ্ট সময়ের কয়েক দিন আগে বা পরে হতে পারে।
তবে এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। যদি অনিয়মিত পিরিয়ডের সঙ্গে কিছু বিশেষ লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সেই লক্ষণগুলো হলো:
১. পেটে তীব্র ব্যথা এবং অতিরিক্ত রক্তপাত ও রক্ত জমাট (ব্লাড ক্লট) হওয়া।
২. পরপর দুই-তিন মাস ধরে পিরিয়ডের স্থায়িত্বকাল এক সপ্তাহের বেশি থাকা অথবা মাত্র দুই-তিন দিন স্থায়ী হওয়া।
৩. পরপর দুই-তিন মাস ধরে ২০ দিনেরও কম সময়ের মধ্যে পিরিয়ড হওয়া।
৪. ৩৫ দিনের বেশি সময় ধরে পিরিয়ড না হওয়া।
কেনো অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা দেখা দেয়?
সাধারণত কিছু বিশেষ শারীরিক সমস্যার কারণে পিরিয়ডের স্বাভাবিক নিয়মে ব্যাঘাত ঘটে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দীর্ঘদিনের মানসিক চাপ, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম, মূত্রনালীর সংক্রমণ (ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন), থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা, পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS), দীর্ঘমেয়াদী হরমোন সংক্রান্ত ওষুধ গ্রহণ এবং মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তি।
অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা দেখা দিলে প্রথমত বোঝার চেষ্টা করতে হবে উপরে উল্লেখিত কোনো কারণ এর জন্য দায়ী কিনা। গর্ভধারণের কারণে পিরিয়ড বন্ধ থাকলে সেটিও নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। এছাড়াও, অনিয়মিত পিরিয়ডের সাথে যদি কোনো শারীরিক অস্বস্তি অনুভূত হয়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যায় উপকারী কিছু খাদ্য উপাদান
পরিমিত ব্যায়ামের পাশাপাশি একটি স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাস মানসিক চাপ কমাতে এবং শরীরের স্বাভাবিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। মানসিক চাপ কমানোর জন্য যেমন যোগা বা মেডিটেশন প্রয়োজন, তেমনি শরীরকে স্বাভাবিক রাখতে কিছু উপকারী খাদ্য উপাদান গ্রহণ করা জরুরি। যা অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা সমাধানে সহায়ক হতে পারে।
তিলের বীজ: পিরিয়ডের সময় তলপেটের ব্যথা কমাতে তিলের বীজের পানীয় পান করা যেতে পারে। এছাড়াও, এই পানীয় দেরিতে পিরিয়ড হওয়ার সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এটি তৈরি করতে এক কাপ জলের সাথে এক চা চামচ তিলের বীজ মিশিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে ¼ কাপে নিয়ে আসুন। এর সাথে আধা চা চামচ গুড় মিশিয়ে পান করুন।
আমলকী: ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই প্রাকৃতিক ফলটি অতিরিক্ত রক্তপাতের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, পিরিয়ডের কারণে হওয়া মাথা ঘোরা এবং বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যাও প্রতিরোধ করে। পাঁচটি-ছয়টি বড় আকারের আমলকীর রসের সাথে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন।
দই ও মধুর পানীয়: অতিরিক্ত রক্তপাতের সাথে তীব্র পেটে ব্যথা কমাতে দই ও মধুর পানীয় খুবই উপকারী। দুটি টেবিল চামচ দই, এক চা চামচ মধু এবং সামান্য লবণ মিশিয়ে নিন। প্রয়োজনে সামান্য জল যোগ করে এই পানীয় তৈরি করে পান করতে পারেন।
উপকারী সবজি ও ফল: প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া সকল সবজি ও ফলই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তবে অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা এবং পিরিয়ডের অন্যান্য উপসর্গ কমাতে কিছু বিশেষ সবজি ও ফল খাওয়া প্রয়োজন।
সবজি: গাজর, বিটরুট, ব্রকলি, পালং শাক।
ফল: কাঁচা পেঁপে, আপেল ও আনারস।
পুদিনা ও ধনিয়া পাতা: পুদিনা ও ধনিয়া পাতার মিশ্রণ শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে এবং পিরিয়ডের সময়কে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে। লবণ, বিটলবণ, আদা, রসুন ও কাঁচামরিচের সাথে পুদিনা ও ধনিয়া পাতা মিশিয়ে চাটনি তৈরি করুন। এই চাটনি প্রতিদিন খাবারের সাথে গ্রহণ করা যেতে পারে।
মনে রাখবেন, ঘরোয়া টোটকাগুলি শুধুমাত্র সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। অনিয়মিত পিরিয়ডের মূল কারণ নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসার জন্য অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত