স্বাভাবিকভাবে প্রতিটি মেয়ের ডিম্বনালী, জরায়ু ও যোনিপথ থেকে সামান্য সাদা স্রাব নিঃসৃত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে অতিরিক্ত সাদাস্রাব মেয়েদের যৌনাঙ্গে ভেজা ও স্যাঁতস্যাঁতে অনুভূতি সৃষ্টি করে, যা দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিকতাকে ব্যাহত করে। লিউকোরিয়া হলে চুলকানিও থাকতে পারে এবং কাপড়ে বাদামি রঙের দাগও দেখা যেতে পারে। এটি মেয়েদের সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যময় চলাফেরায় বাধা সৃষ্টি করে এবং দৈনন্দিন জীবনে এক বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করে।
সাদাস্রাবের কারণ:
বিভিন্ন বয়সে মেয়েদের শরীরে বিভিন্ন পরিমাণে সাদাস্রাব হতে পারে এবং এর সবগুলোই বড় কোনো রোগ নয়। কেবলমাত্র যেগুলো অস্বাভাবিক এবং চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, সেগুলোকেই প্রচলিত অর্থে লিউকোরিয়া বা সাদাস্রাব বলা হয়। স্বাভাবিক কিছু কারণে সাদাস্রাব হতে পারে, যেমন:
১. জন্মের পর মেয়ে শিশুদের ১ থেকে ১০ দিনের মধ্যে কোনো কারণ ছাড়াই যোনিপথে সাদাস্রাব নির্গত হতে পারে এবং ২ থেকে ৪ দিনের মধ্যেই তা আপনাআপনি সেরে যায়।
২. অনেকের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালে মাসিক শুরু হওয়ার আগে ও পরে কয়েকদিন কোনো সমস্যা ছাড়াই সামান্য সাদা স্রাব স্বাভাবিকভাবেই বের হতে পারে।
৩. জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে সাদাস্রাব হতে পারে।
৪. গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন কারণে সাদাস্রাব হতে পারে।
৫. গরম আবহাওয়ায় অনেক সময় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করলে সাদাস্রাব হতে পারে।
উপরোক্ত কারণগুলো ছাড়াও, অপুষ্টিতে ভুগলে এবং অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলে সাদাস্রাব হতে পারে। এই কারণগুলোতে সাদাস্রাব হলে সাধারণত চিকিৎসার তেমন প্রয়োজন হয় না। তবে রোগী চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিশ্চিত হতে পারেন এবং সমাধানের চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু এর বাইরে অন্য কোনো শারীরিক কারণে হলে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই উপযুক্ত চিকিৎসা করানো উচিত।
প্রাপ্তবয়স্কদের সাদা স্রাব বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। আমাদের দেশে এর অন্যতম প্রধান চারটি কারণ হলো – ক্যান্ডিডিয়েসিস, ট্রাইকোমোনিয়েসিস, গনোরিয়া এবং ক্ল্যামিডিয়াল ইনফেকশন নামক চারটি সংক্রামক যৌনরোগ।
সাদাস্রাবের প্রতিকার:
এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কিছু ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা জরুরি।
নিয়মিত পরিষ্কার ও শুকনো অন্তর্বাস পরতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে অন্তর্বাস যেন অবশ্যই ১০০ ভাগ সুতির হয়।
কুসুম গরম জল ও কম ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করতে হবে যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করার জন্য।
কোনো রকম সুগন্ধি স্প্রে ব্যবহার করা উচিত নয়।
পুষ্টিকর খাবার ও পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করতে হবে। খাবারের তালিকায় যেন রসালো ফল ও শাকসবজি থাকে।
মনে রাখতে হবে, মানসিক দুশ্চিন্তা, ব্যক্তিগত অপরিচ্ছন্নতা ও অপুষ্টি এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই এই ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে নিজের শরীরের স্বাস্থ্য সবসময় সুস্থ রাখতে হবে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, নিয়মিত ও সঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়া করতে হবে, দুশ্চিন্তা ত্যাগ করতে হবে এবং সমস্যা দেখা দিলে তা জটিল হওয়ার আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এই ক্ষেত্রে দেরি করা মোটেও উচিত নয়।