মেয়েদের শরীরে অবাঞ্ছিত লোম? কারণ ও প্রতিকার জানুন!

ছেলেদের শরীরে লোম থাকা স্বাভাবিক হলেও, মেয়েদের শরীরে অস্বাভাবিকভাবে লোম দেখা দিলে তা সত্যিই উদ্বেগের কারণ হতে পারে। এটি কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্য নষ্ট করে না, বরং শরীরের কিছু অন্তর্নিহিত রোগের লক্ষণও হতে পারে। তাই এর সঠিক চিকিৎসা করানো জরুরি।

মেয়েদের ঠোঁটের উপরে, চিবুকে, বুকে, পেটে বা পিঠে যদি পুরুষদের মতো মোটা, কালো বা ঘন লোম দেখা যায়, তবে যেকোনো নারীই অস্বস্তি ও দুশ্চিন্তায় পড়েন। ডাক্তারি ভাষায় নারীদের এই অবাঞ্ছিত লোম বৃদ্ধিকে হারসুটিজম (Hirsutism) বলা হয়।

এই সমস্যাটি কিন্তু খুব বিরল নয়। সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী ৫% থেকে ১৫% বয়ঃসন্ধিকালের মেয়েরা এই সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। তবে পারিবারিক ইতিহাস, গোত্র বা জাতিভেদে এর ভিন্নতা দেখা যায়। মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার নারীদের মধ্যে এই সমস্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। এছাড়াও, যাদের ওজন বেশি বা যারা স্থূল, তাদের মধ্যেও এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।

কীভাবে তৈরি হয় অবাঞ্ছিত লোম?

মেয়েদের শরীরে সাধারণত পুরুষ হরমোন এন্ড্রোজেনের পরিমাণ খুবই কম থাকে। কিন্তু কোনো কারণে ডিম্বাশয় (Ovary) বা অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি (Adrenal Gland) থেকে এই এন্ড্রোজেন বেশি পরিমাণে উৎপাদিত হলে অথবা শরীরে এন্ড্রোজেনের কার্যকারিতা বেড়ে গেলে এই হারসুটিজম দেখা দিতে পারে।

অতিরিক্ত এন্ড্রোজেন তৈরির কারণগুলো কী?

প্রথমেই জানা দরকার, এটি কোনো রোগ নয়, বরং একটি লক্ষণ। বিভিন্ন কারণে মেয়েদের রক্তে পুরুষ হরমোন এন্ড্রোজেনের আধিক্য ঘটতে পারে।

ঝুঁকির কারণ (Risk Factors):

সাধারণত মেনোপজ শুরু হয়েছে বা হচ্ছে – এই সময়কাল বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। মেনোপজের সময় হরমোনের পরিবর্তন ঘটে, তাই ঝুঁকি বাড়ে। তবে যেকোনো বয়সেই এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অবিবাহিত মহিলাদের অনিয়মিত মাসিকও এর সাথে সম্পর্কযুক্ত থাকতে পারে।
বিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত মাসিকের সাথে সন্তান হওয়া বা না হওয়ার বিষয়টিও জড়িত থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।
মূল কারণসমূহ:

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম (Polycystic Ovary Syndrome – PCOS): প্রায় ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে অবাঞ্ছিত লোমের প্রধান কারণ এটি। অবাঞ্ছিত লোম বৃদ্ধির পাশাপাশি মুখে ব্রণ, মাথার চুল পড়া, ঘাড়ে কালো দাগ, ওজন বৃদ্ধি বা স্থূলতা, অনিয়মিত মাসিক, গর্ভধারণে সমস্যা, উচ্চ রক্তশর্করা-কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ, ডিম্বাশয়ে সিস্ট ইত্যাদি উপসর্গও থাকতে পারে।
অনির্ণিত কারণ (Idiopathic Hirsutism): অনেক সময় বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেও সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। পারিবারিক ইতিহাস থাকতে পারে অথবা স্থূল মেয়েদের ক্ষেত্রে এটি দেখা দিতে পারে।
ডিম্বাশয় এবং অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির টিউমার বা হাইপারপ্লাসিয়া: এই ধরনের টিউমার থেকে অত্যাধিক পরিমাণে এন্ড্রোজেন হরমোন নিঃসৃত হওয়ার কারণে গলার স্বর পরিবর্তন হতে পারে, শরীরের গঠন বা মাংসপেশির পুরুষালি পরিবর্তন ঘটে, এমনকি জননেন্দ্রিয়েরও পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।
অন্যান্য হরমোনজনিত রোগ: থাইরয়েডের সমস্যা, কুসিংস সিনড্রোম, অ্যাক্রোমেগালি, প্রোলেকটিনোমা, ইনসুলিন রেজিসটেন্স সিনড্রোম ইত্যাদি কারণেও এই অবাঞ্ছিত লোম বৃদ্ধির সমস্যা হতে পারে। তবে এই কারণগুলো তুলনামূলকভাবে বিরল।
ওষুধ: কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়ও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন – স্টেরয়েড, ডেনাজল, মিনোক্সিডিল, মেটোক্লোপ্রামাইড, মিথাইলডোপা, ফেনোথায়াজিন, প্রোজেস্টেরন ইত্যাদি।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে:

১) লোম যদি খুব দ্রুত হারে বাড়তে থাকে।
২) যদি অন্যান্য পুরুষালি লক্ষণ দেখা যায়, যেমন – কণ্ঠস্বর পরিবর্তন, ব্রণ হওয়া, পেশি বৃদ্ধি, স্তন ছোট হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
৩) যদি মাসিকের সমস্যা থাকে।

মেয়েদের অবাঞ্ছিত লোমের প্রতিকার:

কারণ নির্ধারণ করে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয় এবং ফল পেতে কমপক্ষে ছয় মাস সময় লাগতে পারে।

ওষুধের পাশাপাশি ওয়াক্সিং, শেভিং, হেয়ার রিমুভাল ক্রিম, ইলেকট্রোলাইসিস, লেজার ইত্যাদির মাধ্যমে সাময়িকভাবে অবাঞ্ছিত লোম কমানো যায়।

ওজন কমানো এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি উচ্চ রক্তশর্করা, কোলেস্টেরল বা উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তবে তারও চিকিৎসা করানো উচিত।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy