পালং শাক: পুষ্টিগুণে ভরপুর, তবে অতিরিক্ত গ্রহণে দেখা দিতে পারে কিছু সমস্যা

পালং শাক: পুষ্টিগুণে ভরপুর, তবে অতিরিক্ত গ্রহণে দেখা দিতে পারে কিছু সমস্যা
কলকাতা: শীতের আগমন মানেই বাজারে হরেক রকমের শাক-সবজির সমাহার। আর এই সময়ে পালং শাকের কদর থাকে তুঙ্গে। ভিটামিন এ, সি থেকে শুরু করে নানা ধরনের খনিজ পদার্থে ভরপুর এই শাক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। স্বাদে ও পুষ্টিগুণে পালং শাক সত্যিই অনন্য।

শীতকালে এই শাক সহজলভ্য হওয়ায় অনেকেই বেশি পরিমাণে খেয়ে থাকেন। এমনকি অনেকের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পালং শাকের বিভিন্ন পদ জায়গা করে নেয়। শাক-সবজি খাওয়া শরীরের জন্য নিঃসন্দেহে ভালো, তবে অতিরিক্ত পালং শাক খাওয়া কিছু ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হতে পারে। আসুন জেনে নেওয়া যাক পালং শাকের ৪টি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে-

কিডনিতে পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়:

পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে অক্সালেট নামক উপাদান থাকে। অতিরিক্ত পালং শাক খেলে এই অক্সালেট কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে। প্রস্রাবে অক্সালেটের পরিমাণ বেড়ে গেলে কিডনিতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট পাথর জমা হতে শুরু করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ১০০ গ্রাম পালং শাকে প্রায় ৯৭০ মিলিগ্রাম অক্সালেট থাকে। তবে, পালং শাক সেদ্ধ করলে অক্সালেটের পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে। এছাড়াও, এই শাকের সাথে ক্যালসিয়াম-ভিত্তিক খাবার যেমন দই বা পনির মিশিয়ে খেলে পাথর গঠনের ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।

যদিও প্রতিটি মানুষের শারীরিক গঠন ভিন্ন, তাই এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আলাদা হতে পারে। তবুও, যেকোনো কিছুই অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত নয়। বিশেষ করে যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাদের পালং শাক খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রক্ত পাতলাকারী ওষুধের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়:

পালং শাকে উচ্চ মাত্রার ভিটামিন কে বিদ্যমান। এই ভিটামিন রক্ত পাতলাকারী ওষুধের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। স্ট্রোকের মতো সমস্যা প্রতিরোধে অনেক সময় রোগীদের রক্ত পাতলা করার ওষুধ দেওয়া হয়। তাই, যারা এই ধরনের ওষুধ সেবন করছেন, তাদের পালং শাক খাওয়া কমাতে হবে।

আধা কাপ রান্না করা পালং শাকে প্রায় ৪৪৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন কে থাকে। যেখানে এক কাপ কাঁচা পালং শাকে এই পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ ১৪৫ মিলিগ্রাম। রান্নার ফলে পালং শাকের জলীয় অংশ কমে যাওয়ায় ভিটামিন কে-এর ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়।

তবে ভিটামিন কে শরীরের জন্য অপরিহার্য। এটি করোনারি হৃদরোগ, ক্যান্সার ও অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

খনিজ শোষণে বাধা সৃষ্টি করে:

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে শরীরে খনিজ পদার্থের শোষণ ব্যাহত হতে পারে। অক্সালেট একটি অ্যান্টিনিউট্রিয়েন্ট। পালং শাকের অক্সালেট ক্যালসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের শোষণে বাধা দেয়।

পালং শাকে অক্সালেট ও ক্যালসিয়াম উভয়ই present থাকে। ফলে অতিরিক্ত পরিমাণে এই শাক খেলে ক্যালসিয়াম শোষণ ব্যাহত হতে পারে। এছাড়াও, পালং শাকের অক্সালেট লোহার সঙ্গে বিক্রিয়া করে স্ফটিক গঠন করে এবং এর শোষণকেও বাধা দেয়।

থাইরয়েডের সমস্যা বাড়াতে পারে ও গেঁটেবাত সৃষ্টি করতে পারে:

মনে করা হয়, পালং শাক থাইরয়েডের সমস্যাও বাড়াতে পারে। এতে গয়ট্রোজেন নামক কিছু যৌগ থাকে যা এই সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তবে এই বিষয়ে এখনও গবেষণা চলছে এবং ফলাফল মিশ্র। তাই থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে খাদ্যতালিকায় পালং শাক যোগ করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

অন্যদিকে, পালং শাকে পিউরিন নামক একটি রাসায়নিক যৌগ থাকে। কিছু গবেষণায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে এটি গাউটের সমস্যাকে প্রভাবিত করতে পারে। যদিও এই বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন, তবুও যাদের গেঁটেবাতের সমস্যা রয়েছে, তাদের পালং শাক খাওয়ার বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কিছু গবেষণা আরও জানায় যে, অতিরিক্ত পালং শাক গ্রহণের ফলে রক্তচাপ ও রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে। যারা উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ খাচ্ছেন, তাদের ক্ষেত্রে এই শাক বিপজ্জনক হতে পারে।

পরিশেষে বলা যায়, পালং শাক নিঃসন্দেহে একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার এবং স্বাস্থ্যের জন্য এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। তবে যেকোনো খাবারই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত পরিমাণে কোনো কিছুই গ্রহণ করা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy