বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ত্বকেও কিছু পরিবর্তন আসা স্বাভাবিক। চুল সাদা হওয়া, ত্বক কুঁচকে যাওয়া কিংবা স্থিতিস্থাপকতা হারানো প্রকৃতির নিয়ম। তবে অনেক সময় অনিয়মিত জীবনযাপন বা অন্যান্য কারণে বয়সের আগেই ত্বক ঝুলে যেতে দেখা যায়। এই কারণে সমবয়সীদের মাঝেও একজনকে বেশি বয়স্ক মনে হতে পারে, যা স্বাভাবিকভাবেই আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়।
সাধারণত পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ত্বকে বয়সের ছাপ দ্রুত পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের বেভারলি হিলসের কসমেটিক সার্জন ডা. জন সি লায়েকের মতে, ত্বক ঝুলে যাওয়ার প্রধান তিনটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব, যার কারণে ত্বক নীচের দিকে টান অনুভব করে। দ্বিতীয়ত, ত্বকের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কোলাজেন এবং ইলাস্টিনের অভাব। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই উপাদানগুলির উৎপাদন কমতে থাকে, ফলে ত্বক তার টানটান ভাব হারায়। তৃতীয়ত, ত্বকের সঙ্গে সংযুক্ত নরম টিস্যুগুলির দুর্বল হয়ে যাওয়া। সময়ের সাথে সাথে এই টিস্যুগুলি ক্ষয় হতে শুরু করে, যার ফলে ত্বক ঝুলে যায়। তবে আশার কথা এই যে, কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
কসমেটিক সার্জন ডা. জন সি লায়েক অস্ত্রোপচার ছাড়াই ত্বককে পুনরায় টানটান করার কয়েকটি সহজ উপায় বাতলেছেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই পদ্ধতিগুলি:
১. শীর্ষাসন (Headstand): যোগ ব্যায়ামের এই আসনটি, যা হেডস্ট্যান্ড নামেও পরিচিত, ত্বককে টানটান রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এই ব্যায়ামের সময় পা উপরের দিকে এবং মাথা নীচের দিকে থাকে, ফলে মস্তিষ্কে এবং তার आसपासের অঞ্চলে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। শরীরের যে অংশে রক্ত প্রবাহে বাধা থাকে, এই ব্যায়ামের মাধ্যমে তা সচল হয়। এটি যেমন মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চুলকে ভালো রাখে, তেমনই ত্বকের ঝুলে যাওয়া রোধ করতেও সহায়ক।
২. পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ: আপনার খাদ্য তালিকা থেকে ফাস্টফুড, তৈলাক্ত এবং ভাজা খাবার সম্পূর্ণ বাদ দিন। প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার, যেমন ক্যারোটিনয়েডস, টোকোফেনলস এবং ফ্ল্যাভোনয়েডস, ভিটামিন (এ, সি, ডি এবং ই) এবং প্রয়োজনীয় ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের বার্ধক্য কমাতে এবং সৌন্দর্য বাড়াতে সাহায্য করে।
কমলালেবু, ব্রোকলি, গাজর, সেলারি, মিষ্টি আলু, পালংশাক, জবা ফুল, পনির, গরুর কলিজা, পুদিনা পাতা, টমেটো, পার্সলে, পেঁপে, জলপাই তেল, বিভিন্ন ধরনের বিনস, আখরোট, টুনা মাছ, অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ এবং ডিমের মতো অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-এজিং বৈশিষ্ট্যযুক্ত খাবার আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে যোগ করুন।
৩. ফেস মাস্ক ব্যবহার: অনেকেই ত্বকের প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দেন না। তবে নিয়মিত ফেসিয়াল মাস্ক ব্যবহার আপনার ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ত্বকের বার্ধক্যের লক্ষণ কমাতে বা দূর করতে এর চেয়ে সহজ উপায় আর কিছু হতে পারে না। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি সপ্তাহে অন্তত তিন দিন এই মাস্ক ব্যবহার করুন। এটি একদিকে যেমন আপনার ত্বকের বয়সের ছাপ কমাবে, তেমনই ত্বককে কোমল ও উজ্জ্বল করে তুলবে।
এই মাস্কটি তৈরি করতে একটি পরিষ্কার পাত্রে একটি ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে সমপরিমাণ অ্যাভোকাডো, কিউই এবং গাজরের রস মিশিয়ে নিন। এর সাথে এক চা চামচ কফি যোগ করে ভালোভাবে মিশ্রণ তৈরি করুন। পরিষ্কার ত্বকে এই মিশ্রণটি লাগান এবং শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
সুতরাং, বয়স বাড়ার আগেই যদি ত্বকের ঝুলে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত হন, তবে এই সহজ ঘরোয়া উপায়গুলি অবলম্বন করে আপনি অবশ্যই উপকার পাবেন এবং ত্বককে আরও তারুণ্যদীপ্ত করে তুলতে পারবেন।