৬ ঘণ্টার কম ঘুমিয়ে যেভাবে মৃত্যুকে ডাকছেন আপনি, ভয় না পেয়ে জেনেনিন

ঘুম মানুষের জীবন চক্রে অতি প্রয়োজনীয় বিষয়। প্রাকৃতিক ইকো সিস্টেমের মতো মানুষের দেহেও ইকো সিস্টেম রয়েছে। সেই প্রক্রিয়া জেগে থাকার পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুম দেহের জন্যে অত্যন্ত জরুরি। যন্ত্রাংশের কার্যক্ষমতা কমে গেলে যেমন রিচার্জ করা দরকার হয়। ঠিক তেমনি মানবদেহের রিচার্জ হচ্ছে পর্যাপ্ত ঘুম। শরীরের কার্যক্ষমতা কোনো কারণে কমে গেলে পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে তা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আর পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরে দেখা নানা জটিলতা। শুধুমাত্র ঘুমের অভাবে মানব দেহে দেখা দিতে অন্তত ১১টি রোগ। জেনে নিন সেগুলো:

ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা: পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে মানবদেহে ক্যান্সারের সংক্রমণ ঘটতে পারে। বিশেষ করে স্তন ক্যান্সার এবং প্রোটেস্ট ক্যান্সার। এছাড়া একটা গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিক সময়ে ঘুমের পরিবর্তে কাজ করা ক্যান্সারের অন্যতম কারণ।

স্থূলতা বৃদ্ধি: পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শরীরে স্থুলতা বৃদ্ধি পায়। এর পেছনের কারণ হিসেবে গবেষণায় দেখা যায়, পর্যাপ্ত ঘুম হলে মানবদেহের জন্যে যে ক্যালরি দরকার সেটুকু পেলেই শরীরে সমস্যা হয় না। কিন্তু ঘুম ঠিক মতো না হলে ক্ষুধা বেড়ে যায়। তাতে শরীরের জন্যে প্রচুর ক্যালরির প্রয়োজন হয়। তাতে মানুষের খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ।

সংক্রমণ: পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শরীরে প্রো-ইনফ্লেমেটরি প্রোটিনের আধিক্য দেখা দেয়। এই ধরনের আধিক্য শরীরে বহু সংক্রমণ ঘটায়।

বিষন্নতা: পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শুধু মানবদেহে সমস্যা হয় না। মনোজগতেও ব্যাপক পরিবর্তন আনে। বিষন্নতার অন্যতম কারণ ঘুমের অভাব। ঘুমের অভাবে মনোজগতে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।

মনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা: পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে আমাদের মনোজগতের নিয়ন্ত্রণ আমরা হারিয়ে ফেলি। গবেষণায় দেখা যায়, যারা পর্যাপ্ত ঘুমায় না তারা অন্যের মানষিক অবস্থা বুঝতে পারে না। পরিবার বন্ধু এবং সহকর্মীদের সঙ্গে তাদের প্রায় ঝামেলায় জড়াতে হয়।

ইমিউন সিস্টেমের দুর্বলতা: আমাদের শরীরে ইমিউন সিস্টেম যদি ঠিক থাকে যেকোনো রোগকে শরীর নিজেই প্রতিরোধ করার সক্ষমতা রাখে। কিন্তু ঘুমের অভাবে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পরে। এতে শরীরে বিভিন্ন রোগ দানা বাঁধে।

ত্বক নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা: পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীর থেকে ‘কর্টিসল’ হরমোন উৎপন্ন হয়। এটাকে স্ট্রেস হরমোন বলে। এই হরমোনের অন্যতম খারাপ দিক হচ্ছে যে প্রোটিন ত্বককে সুন্দর এবং সাবলীল রাখে তা নষ্ট করে দেয়।

মৃত্যুর সম্ভাবনা: গবেষণা দেখা গেছে এবং গবেষকরা প্রত্যক্ষ প্রমাণ পেয়েছে যে ব্যক্তি রাতের বেলায় অন্তত ছয় ঘণ্টার কম ঘুমায় তার পরবর্তী দশ বছরে মৃত্যুর সম্ভাবনা চারগুণ বৃদ্ধি পায়।

হার্টের সমস্যা বৃদ্ধি: পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শরীর থেকে যে হরমোন নিসৃত হয় তাতে টেনশন এবং মনো বৈকল্য দেখা দেয়। তাতে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। রাতের বেলায় ছয় ঘণ্টা ঘুমের অভাবে হার্ট এটাকে মৃত্যুর সম্ভাবনা ৪৮ শতাংশ বেড়ে যায়। এছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শরীরে রক্তচাপ অত্যন্ত বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে রক্তচাপ অনিয়মিত হয়ে পড়ে। এছাড়া হৃদ-স্পন্দনও অনিয়মিত হয়ে পড়ে। এছাড়া আমেরিকান সেনাবাহিনীর ওপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে যে সমস্যা গুলো দেখা যায় তার অন্যতম একটি মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ।

শারীরিক ব্যথা বেড়ে যাওয়া: অনেক মানুষ শারীরিক কিছু সমস্যার কারণে প্রতিনিয়ত ব্যথায় ভোগে। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে ব্যথার পরিমাণ বেড়ে যায়।

এলঝাইমার রোগের সম্ভাবনা: ঘুমের একটি নির্দিষ্ট সাইকেল আছে। সেই সাইকেল মেনে ঘুমালে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও কাজে আসে। কিন্তু কোনোভাবে এই সাইকেল মেনে না চললে বা ঠিকমতো না ঘুমালে। মস্তিস্ক যে ডাটা সংরক্ষণ করে তা হারিয়ে ফেলে। এর ফলে মস্তিস্কের যে সেলগুলো রয়েছে তা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পরবর্তীতে এলঝাইমার রোগের বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

Related Posts

© 2024 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy