চাকরি যাবে, তবুও পরীক্ষা! কোলে এক মাসের সন্তান, SSC ভবনে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শিক্ষিকাদের কান্না ও আবেদন!

স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির চাকরিপ্রার্থীদের নথি যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে আজ। প্রি-ইন্টারভিউ পর্বের এই দিনে নতুন পরীক্ষার্থীদের পাশাপাশি দেখা গেল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি হারানো বেশ কিছু যোগ্য শিক্ষককেও। দূরদূরান্ত থেকে কোলের এক মাসের সন্তানকে নিয়ে তাঁরা করুণাময়ীর এসএসসি-র নতুন ভবনে হাজির হয়েছেন। বিশেষভাবে সক্ষম পরীক্ষার্থীরাও এই পর্বে অংশ নিয়েছেন।

এঁদের মধ্যে সদ্য মায়েরা বেশিরভাগই চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষিকা, যাঁরা পরীক্ষা দেওয়ার সময় ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। এমনকি চাকরি বাতিলের সময়ও তাঁরা ছিলেন গর্ভবতী। চাকরি হারানোর মানসিক বিপর্যয় ও তার সঙ্গে গর্ভাবস্থার কঠিন পরিস্থিতি পেরিয়ে পরিবারের সমর্থনে তাঁরা ফের লড়াইয়ে ফিরেছেন। কিন্তু নতুন করে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করলেও চাকরি পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই, এই অনিশ্চয়তা তাঁদের গ্রাস করে রেখেছে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের বাসিন্দা সুপর্ণা পাল, যিনি ২০১৬ সালের চাকরিপ্রার্থী ছিলেন, তিনি এক মাসের সন্তানকে নিয়ে স্বামী সুমিত নস্করের সঙ্গে এসেছেন নথি যাচাই করাতে। সুপর্ণা ক্ষোভের সঙ্গে জানান, “ভেতরে ভেরিফিকেশন হল, সমস্ত তথ্য দেখলেন, স্বাক্ষর করালাম। কিন্তু সবচেয়ে খারাপ লাগছে, এখনও কোনো রিসিভ কপি দেয়নি।” তিনি আরও বলেন, “শারীরিকভাবে খুব অসুস্থ ছিলাম, সেই অবস্থাতেও পরীক্ষা দিয়েছি। আমাদের জোর করে আগুনে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।”

তাঁর স্বামী সুমিত নস্কর, যিনি একজন কলেজের অধ্যাপক, তিনি বলেন, “চাকরি হারিয়ে আমার স্ত্রী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। লোন চলছিল, এরই মধ্যে ও অন্তঃসত্ত্বা ছিল। সেই পরিস্থিতি ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। পাশে ছিলাম বলে নিজেকে সামলেছে। আজ তথ্য যাচাই হল, কিন্তু নিশ্চিত নই যে স্ত্রী চাকরিটা পাবেই। কারণ অনেককেই ডাকা হয়েছে।”

হুগলির মানকুণ্ডুর আরেক চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষিকা পিয়ালী ঘোষও এসেছেন তাঁর সদ্যোজাতকে কোলে নিয়ে। তিনি বলেন, “আমরা সৎ ও যোগ্য মানুষ হওয়া সত্ত্বেও পরিস্থিতির শিকার। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পরীক্ষা দিয়েছি। ঈশ্বরের কৃপায় এসেছি। ভেরিফিকেশন খুব ভালো হয়েছে, সকলে সহযোগিতা করেছেন।”

১০ নম্বর বিতর্ক: নতুন VS পুরনো

যোগ্য চাকরিহারাদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অতিরিক্ত ১০ নম্বর দেওয়ায় কিছু নতুন পরীক্ষার্থী অসন্তোষ প্রকাশ করলেও, এদিন এসএসসি ভবনে কিন্তু নতুন বা পুরনো পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো বিদ্বেষের চিত্র দেখা যায়নি। বরং একে অপরের প্রতি সহানুভূতিই শোনা গেল তাঁদের কথায়।

সুপর্ণা পালের বক্তব্য, “আমরা চেয়েছিলাম আমাদের আলাদা করে পরীক্ষা নেওয়া হোক। নতুনদের সঙ্গে কেন পরীক্ষা নেওয়া হল! তখন তাঁরা প্রতিবাদ করেননি, এখন কেন করছেন? সবটাই এসএসসি ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে হয়েছে। আমরা চাইব ২০১৬ সালের সব যোগ্য প্রার্থী চাকরি পাক। শূন্যপদ বাড়ালে আরও ভালো হয়।”

অন্যদিকে, পিয়ালী ঘোষ নতুন পরীক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে বলেন, “এটা খুব কষ্টকর। অনেকদিন তো পরীক্ষা হয়নি। আমিও আশা রাখব, ওনারাও চাকরির সুযোগ পান। বেকারত্বের জ্বালা বুঝি।” তবে চাকরি পাওয়ার অনিশ্চয়তা নিয়ে তিনি বলেন, “১০ জনের জন্য ১৬ জনকে ভেরিফিকেশনের জন্য ডাকা হচ্ছে। কারা শেষ পর্যন্ত চাকরি পাবে জানি না।”

মুর্শিদাবাদের নতুন চাকরিপ্রার্থী সনৎ হালদার, যিনি পোলিও আক্রান্ত এবং লাঠির উপর ভরসা করে এসেছেন, তিনি যোগ্য চাকরিহারাদের অতিরিক্ত ১০ নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “ওদের অভিজ্ঞতার জন্য এই নম্বরটা দেওয়া হয়েছে। ওরা এটা পাওয়ার যোগ্য। আসন সংখ্যা বাড়ালে ভালো হবে।”

সনৎ জানান, তাঁর সার্টিফিকেট রিনিউয়াল নিয়ে সামান্য সমস্যা দেখা দিলেও, তিনি চাকরি পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy