বর্তমান সময়ে ডায়াবেটিস একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে, যা কেবল প্রাপ্তবয়স্কদেরই নয়, শিশুদের মধ্যেও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই রোগ মূলত দুই প্রকারের হয়ে থাকে: টাইপ ১ এবং টাইপ ২।
সম্প্রতি, আমেরিকার পপ তারকা এবং অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার স্বামী নিক জোনাস এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে তিনি মাত্র ১৩ বছর বয়সে টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই সময় তার মনে হয়েছিল, যেন তার জীবনের অনেক ভালো লাগা এখানেই শেষ হয়ে যাবে। তিনি জানান, নানা সমস্যায় জীবন অতিবাহিত হলেও বাবা-মায়ের তৎপরতায় তিনি পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছেন। নিক জোনাস তার ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে এই বিষয় নিয়ে সচেতনতাও ছড়িয়েছেন।
টাইপ ১ ডায়াবেটিস সাধারণত জেনেটিক কারণে হলেও, ভুল জীবনধারা এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণেও এই রোগ হতে পারে। শিশুদের মধ্যে ডায়াবেটিসের সমস্যা বৃদ্ধির পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যা প্রতিরোধে পরিবার এবং সমাজের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুদের ডায়াবেটিসের প্রধান কারণসমূহ:
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: শিশুদের ডায়াবেটিসের একটি প্রধান কারণ হলো ভুল খাদ্যাভ্যাস। আজকাল শিশুরা জাঙ্ক ফুড, ফাস্ট ফুড, চিপস, কোল্ড ড্রিংকস এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি খায়। এই খাবারগুলিতে চিনি, নুন এবং অস্বাস্থ্যকর চর্বি বেশি থাকে, যা শরীরে ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
শারীরিক কার্যকলাপের অভাব: আধুনিক জীবনযাত্রায় শিশুরা টিভি, মোবাইল এবং ভিডিও গেমে বেশি সময় ব্যয় করে। এর ফলে তাদের শারীরিক কার্যকলাপ কমে যায়। শারীরিক কার্যকলাপের অভাব স্থূলতা বৃদ্ধি করে, যা টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের জন্য একটি প্রধান ঝুঁকির কারণ।
স্থূলতা: শিশুদের ডায়াবেটিসের একটি প্রধান কারণ হলো স্থূলতা। উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার এবং শারীরিক ক্রিয়াকলাপের অভাব শিশুদের ওজন বৃদ্ধির কারণ হয়। স্থূলতা শরীরে ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়া: শিশুরা মিষ্টি খেতে ভালোবাসে, কিন্তু অতিরিক্ত চকলেট, ক্যান্ডি, মিষ্টি এবং চিনিযুক্ত পানীয় পান করলে তাদের শরীরে চিনির মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এই অভ্যাস শিশুদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
পর্যাপ্ত ঘুম না পাওয়া: ঘুমের অভাব শিশুদের ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে। সঠিক ঘুমের অভাব শরীরের বিপাক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা হ্রাস করে। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
মানসিক চাপ: আজকাল শিশুরাও পড়াশোনা, পরীক্ষা এবং সামাজিক চাপের কারণে মানসিক চাপের সম্মুখীন হয়। মানসিক চাপের কারণে শরীরে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা রক্তে শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
বংশগত কারণ: যদি পরিবারের কারো ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে শিশুদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। যদিও এটি একটি জেনেটিক ফ্যাক্টর, অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস এবং জীবনধারা এই ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
প্রতিরোধের উপায়:
গবেষকদের মতে, স্বাস্থ্যকর খাবার এবং নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে কোলন ক্যানসারের মতো রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব, ঠিক তেমনই ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অত্যন্ত জরুরি। শিশুদের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে বাবা-মা এবং অভিভাবকদের সচেতনতা বিশেষভাবে প্রয়োজন। ফাস্ট ফুড, চিনিযুক্ত পানীয় এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করে সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। পাশাপাশি, টিভি, মোবাইল এবং ভিডিও গেমের পরিবর্তে আউটডোর খেলাধুলা এবং শারীরিক কার্যকলাপের প্রতি শিশুদের উৎসাহিত করা অপরিহার্য। পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করাও শিশুদের ডায়াবেটিস প্রতিরোধের জন্য অত্যন্ত জরুরি।