আধুনিকতার যুগেও কি আমরা মধ্যযুগে ফিরে যাচ্ছি? উত্তরপ্রদেশের বাঘপত জেলার খাপ পঞ্চায়েতের সাম্প্রতিক একগুচ্ছ নির্দেশিকা সেই প্রশ্নই তুলে দিল। তথাকথিত ‘সংস্কৃতি রক্ষা’ এবং পাশ্চাত্য প্রভাব রুখতে এবার তরুণ-তরুণীদের স্মার্টফোন ব্যবহার এবং হাফ প্যান্ট পরার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পঞ্চায়েত। এই ফরমান ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক।
কী কী রয়েছে এই ফতোয়ায়? পঞ্চায়েতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৮ থেকে ২০ বছরের কম বয়সিদের হাতে কোনওভাবেই স্মার্টফোন দেওয়া যাবে না। শুধু মেয়েদের নয়, ছেলেদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। খাপ প্রধানদের দাবি, মোবাইল ব্যবহারের ফলে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ‘খারাপ অভ্যাস’ তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি, প্রকাশ্যে ছেলে-মেয়েদের হাফ প্যান্ট পরাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পঞ্চায়েত কর্তাদের মতে, পরিবারের বড়দের কাছে বসে শিক্ষা নেওয়ার বদলে স্মার্টফোনে সময় কাটানো সমাজের জন্য ক্ষতিকর।
বিয়েবাড়িতেও কঠোর ‘সেন্সর’: শুধু পোশাক বা ফোন নয়, বিয়ের মতো সামাজিক অনুষ্ঠানের ওপরও নজরদারি চালাচ্ছে খাপ পঞ্চায়েত। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, কোনও বিয়ের অনুষ্ঠান ম্যারেজ হলে করা যাবে না; বিয়ে হতে হবে গ্রামেই বা নিজের বাড়িতে। খরচ কমাতে এবং আড়ম্বর রুখতে নিমন্ত্রণপত্র ছাপানোর বদলে হোয়াটসঅ্যাপে আমন্ত্রণ পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অতিথির সংখ্যাও রাখতে হবে সীমিত।
যুক্তি ও বিতর্ক: থম্বা দেশ খাপের চৌধুরী ব্রজপাল সিং এবং ডাগধ খাপের চৌধুরী ওমপাল সিংয়ের মতে, এই সিদ্ধান্তগুলি সময়োপযোগী এবং সামাজিক সৌহার্দ্য বজায় রাখার জন্য জরুরি। তাঁদের দাবি, রাজস্থানের কিছু গ্রামও এমন পথ অনুসরণ করছে। তবে আধুনিক সমাজে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর এমন হস্তক্ষেপ কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিন্দার ঝড় উঠেছে। প্রশ্ন উঠছে, একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে এমন ‘ফতোয়া’ কি সত্যিই গ্রহণযোগ্য?