বহিস্কৃত তৃণমূল নেতা হুমায়ুন কবীরের (Humayun Kabir) মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় ‘বাবরি’ মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন নিয়ে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলায় হস্তক্ষেপ করতে রাজি হল না কলকাতা হাইকোর্ট। ফলে, ৬ ডিসেম্বর মসজিদ তৈরির প্রক্রিয়ায় আপাতত আর কোনো আইনি বাধা রইল না।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পাল এবং বিচারপতি পার্থসারথি সেনের ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে যে, মসজিদ তৈরির প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে যাতে এলাকায় বা জেলায় কোনোরকম অশান্তি না ছড়ায়, রাজ্য সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
মামলায় বাদী-বিবাদী পক্ষের সওয়াল:
জনস্বার্থ মামলার যুক্তি (বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য): মামলার পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “৬ ডিসেম্বর নতুন করে মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়াতে পারে।” তিনি যুক্তি দেন, বেলডাঙায় ‘বাবরি’ মসজিদের শিলান্যাস হলে সাম্প্রদায়িক টানাপোড়েনের পরিবেশ তৈরি হবে, যা বড় অশান্তির আকার নিতে পারে।
রাজ্য সরকারের আশ্বাস (কিশোর দত্ত): এর উত্তরে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত আদালতকে আশ্বাস দেন, “আমরা পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করেছি। রাজ্য প্রশাসন নজর রাখছে, যাতে আইনশৃঙ্খলার কোনো অবনতি না হয়।”
কেন্দ্রের অবস্থান (রাজদীপ মজুমদার): কেন্দ্রের পক্ষে ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল রাজদীপ মজুমদার আদালতকে জানান, “ওই এলাকায় আগেও অশান্তি হয়েছে। তাই ইতিমধ্যেই ১৯ কোম্পানি সিআইএসএফ (CISF) মোতায়েন করা রয়েছে।”
কলকাতা হাইকোর্টের কড়া নির্দেশ:
সব পক্ষের সওয়াল শোনার পর হাইকোর্ট রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রকে নিম্নলিখিত নির্দেশ দেয়:
আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ: “রাজ্যকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, রাজ্য যেন কড়া হাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে।”
সম্প্রীতি রক্ষা: নিশ্চিত করতে হবে যে সাম্প্রতিক সম্প্রীতি কোনোভাবে নষ্ট না-হয়।
পুলিশ মোতায়েন: এলাকায় যথেষ্ট পরিমাণে পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করতে হবে।
কেন্দ্রের সাহায্য: কেন্দ্রীয় সরকারকেও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে রাজ্যকে সাহায্য করতে হবে।
হুমায়ুনের প্রতিশ্রুতি: মামলার শেষে হুমায়ুন কবীরের আইনজীবী শুভাশিস দাশগুপ্ত আদালতকে লিখিত প্রতিশ্রুতি (‘আন্ডার টেকিং’) দিয়ে জানান, তাঁর তরফে এমন কিছু করা হবে না, যাতে শান্তিশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: উল্লেখ্য, অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন অর্থাৎ ৬ ডিসেম্বরই বেলডাঙায় ‘বাবরি’ মসজিদের শিলান্যাসের ঘোষণা করেছিলেন হুমায়ুন কবীর। এই ঘোষণার জেরে একাধিক উস্কানিমূলক মন্তব্যের অভিযোগ ওঠার পরেই শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে তৃণমূল তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করে। এর আগে ওয়াকফ আইনের বিরোধিতা করে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান ও সামশেরগঞ্জ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল, যেখানে হাইকোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হয়েছিল।