মধ্যপ্রদেশের কাঠনি জেলায় জাতিগত অসহিষ্ণুতা ও নৃশংস অত্যাচারের এক ভয়ঙ্কর ঘটনা সামনে এসেছে, যা রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। সরকারি জমিতে অবৈধ খনির বিরোধিতা করায় ৩৬ বছর বয়সী দলিত যুবক রাজকুমার চৌধুরীর ওপর শুধু আক্রমণ নয়, তাঁর ওপর প্রস্রাব করার মতো চরম অপমানের অভিযোগ উঠেছে।
এই ঘটনাটি ২০২৩ সালের জুলাই মাসের সিধি-কাণ্ডের ভয়ঙ্কর স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে, যেখানে বিজেপি-ঘনিষ্ঠ প্রবেশ শুক্ল নামে এক ব্যক্তি এক আদিবাসী যুবকের উপর প্রস্রাব করেছিলেন।
ঠিক কী ঘটেছিল?
রাজকুমার চৌধুরীর অভিযোগ অনুযায়ী, গত ১৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় কাঠনির রামগড়হা পাহাড়ের কাছে সরকারি জমিতে অবৈধভাবে নুড়ি পাথর (গ্রাভেল) তোলা হচ্ছিল। এই কাজের তদারকি করছিলেন গ্রামের সরপঞ্চ রামানুজ পাণ্ডে ও তাঁর সহযোগীরা।
রাজকুমার ওই অবৈধ কাজের প্রতিবাদ জানালে তাঁকে প্রথমে হুমকি ও পরে জাতিবিদ্বেষী গালাগাল দিয়ে অপমান করা হয়।
আক্রান্ত যুবকের দাবি, বাড়ি ফেরার পথে সরপঞ্চ রামানুজ পাণ্ডে, তাঁর ছেলে পবন পাণ্ডে, ভাইপো সতীশ পাণ্ডে-সহ আরও কয়েকজন তাঁকে ঘিরে ধরে। লাঠি ও লোহার রড দিয়ে তাঁকে বেধড়ক মারা হয়। রাজকুমারের অভিযোগ, “আমাকে মারধরের সময় ওরা জাতিবিদ্বেষী গালাগাল দিয়েছে। মা বাঁচাতে এলে তাঁকেও চুলের মুঠি ধরে টেনে মাটিতে ফেলে মারে। এরপর রামানুজ পাণ্ডের ছেলে আমার গায়ের উপর প্রস্রাব করেন। গ্রামের লোকের সামনে আমাকে চরম অপমান করা হয়।”
তদন্ত শুরু পুলিশের
ঘটনার পর আক্রান্ত যুবককে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। কাঠনির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সন্তোষ দেহারিয়া জানিয়েছেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে চারজনের নামে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। মারধর ও তফসিলি জাতি ও উপজাতি (নির্যাতন প্রতিরোধ) আইন অনুযায়ী মামলা রুজু করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।”
যদিও অভিযুক্ত সরপঞ্চ রামানুজ পাণ্ডে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, “এই অভিযোগ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কোনও অবৈধ খনন হচ্ছিল না। আমরা পঞ্চায়েত ভবনের সংস্কার কাজের জন্য গ্রাভেল তুলছিলাম।”
মধ্যপ্রদেশে তফসিলি জাতির বিরুদ্ধে অপরাধের পরিসংখ্যান
জাতীয় অপরাধ নথি ব্যুরোর (NCRB) ২০২৩ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশজুড়ে তফসিলি জাতির (Scheduled Caste) বিরুদ্ধে অপরাধের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েই চলেছে। গত বছর ভারতে মোট ৫৭,৭৮৯টি এমন ঘটনা নথিভুক্ত হয়, যার মধ্যে শুধু মধ্যপ্রদেশেই ৮,২৩২টি মামলা। উত্তরপ্রদেশ ও রাজস্থানের পরই তফসিলি জাতির বিরুদ্ধে অপরাধের তালিকায় এই রাজ্যের নাম রয়েছে। এই ঘটনাটি সেই পরিসংখ্যানের ভয়াবহতাকেই ফের একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল।