ভারতীয় রেলের টিকিট বুকিংয়ের সময়সীমা ১২০ দিন থেকে কমিয়ে ৬০ দিন করার সিদ্ধান্তের রেশ এবার এসে পড়ল রেলের কোষাগারে। আগে চার মাস আগে থেকে টিকিট বুকিংয়ের সুবিধা থাকায় রেলের হাতে আগাম পুঁজি আসত অনেকটাই বেশি। কিন্তু এখন সেই উইন্ডো দুই মাসে নেমে আসায় আর্থিক স্থিতাবস্থা বজায় রাখা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন রেলের শীর্ষ কর্তারা। যদিও প্রকাশ্যে তাঁরা একে সরাসরি ‘আর্থিক ক্ষতি’ বলতে নারাজ, তবে নয়া ব্যবস্থায় আয় যে ধাক্কা খেয়েছে, তা অভ্যন্তরীণ সূত্রে স্পষ্ট।
রেলের আয়ের একটি বড় অংশ আসত টিকিট বাতিলের ‘ক্লার্কেজ চার্জ’ থেকে। যখন ১২০ দিন আগে বুকিং খোলা থাকত, তখন ওয়েটিং লিস্ট থাকত দীর্ঘ। অনেক যাত্রী কনফার্ম হওয়ার আশায় টিকিট কাটতেন এবং পরে কনফার্ম না হওয়ায় বা ব্যক্তিগত কারণে টিকিট বাতিল করতেন। নিয়ম অনুযায়ী, ট্রেন ছাড়ার ৪৮ ঘণ্টা আগে টিকিট বাতিল করলে শ্রেণিভেদে ৬০ টাকা থেকে ২৪০ টাকা পর্যন্ত কেটে নেওয়া হয়। ৪৮ থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে বাতিল করলে ২৫ শতাংশ এবং ১২ থেকে ৪ ঘণ্টার মধ্যে বাতিল করলে ৫০ শতাংশ টাকা রেলের ভাঁড়ারে জমা হতো। এখন ৬০ দিনের উইন্ডো হওয়ায় ওয়েটিং লিস্টের সংখ্যা নির্দিষ্ট সীমার পর ‘রিগ্রেট’ হয়ে যাচ্ছে, ফলে বাতিল টিকিটের সংখ্যাও কমছে।
বাতিলের চার্জ একনজরে:
প্রথম শ্রেণি এসি/এক্সিকিউটিভ ক্লাস: ২৪০ টাকা
দ্বিতীয় শ্রেণি এসি: ২০০ টাকা
তৃতীয় শ্রেণি এসি: ১৮০ টাকা
স্লিপার ক্লাস: ১২০ টাকা
রেল আধিকারিকদের মতে, আগে চার মাস আগেই যাত্রীদের থেকে বিপুল অর্থ রেলের কোষাগারে জমা পড়ত, যা দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মীদের বেতন মেটানো সহজ হতো। এখন সেই সময় কমে যাওয়ায় লিকুইড ক্যাশ বা নগদ অর্থের প্রবাহে সমস্যা হচ্ছে। এমনিতেই ভারতীয় রেলের অপারেটিং রেশিও নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ক রয়েছে। পণ্য পরিবহণে জোর দিয়ে আয় বাড়ানোর চেষ্টা হলেও, যাত্রী পরিষেবার এই নয়া বুকিং নিয়মে আপাতত কিছুটা রক্ষণাত্মক অবস্থানে রেল মন্ত্রক। তবে কর্তৃপক্ষের আশা, দ্রুত এই নয়া ব্যবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে আর্থিক স্থিতি ফিরে আসবে।