মুসলিম মহিলাদের আর্থিক সুরক্ষা: তালাক দিলে স্ত্রীকে ফিরিয়ে দিতে হবে বিয়ের সব উপহার, নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

বিবাহবিচ্ছেদের পর মুসলিম মহিলাদের আর্থিক সুরক্ষা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে মঙ্গলবার এক যুগান্তকারী নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে, তালাক দেওয়ার পর স্বামীকে অবশ্যই বিয়ের সময় কনে পক্ষের দেওয়া যাবতীয় উপহার, নগদ অর্থ এবং যৌতুক স্ত্রীকে ফেরৎ দিতে হবে। অর্থাৎ, বিচ্ছেদের পর স্বামী সেই সব জিনিস ফিরিয়ে দিতে বাধ্য।

এক মামলায় নির্দেশ ও আর্থিক ক্ষতিপূরণ
এক মুসলিম মহিলার দায়ের করা মামলার শুনানিতে বিচারপতি সঞ্জয় করোল এবং বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিংয়ের ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দেয়। সুপ্রিম কোর্ট তাঁর প্রাক্তন স্বামীকে নির্দেশ দিয়েছে:

ক্ষতিপূরণের পরিমাণ: ওই মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৭ লক্ষ ৬৭ হাজার ৯৮০ টাকা জমা দিতে হবে। এই অর্থের মধ্যে রয়েছে স্বামীর কাছে থাকা যৌতুকের ৩০ ভরি সোনার গয়না এবং একটি ফ্রিজ, টিভি, স্ট্যাবিলাইজার, শোকেস, বক্স খাট এবং ডাইনিংয়ের আসবাবপত্রের মতো অন্যান্য গৃহস্থালীর জিনিসপত্রের মোট অঙ্ক।

সময়সীমা: ছয় সপ্তাহের মধ্যে এই টাকা স্ত্রী’র অ্যাকাউন্টে পাঠাতে হবে এবং কোর্টে একটি হলফনামা জমা দিতে হবে।

সুদের নির্দেশ: বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়েছে, যদি সময় মতো টাকা দেওয়া না-হয়, তবে স্বামীকে বার্ষিক ৯ শতাংশ হারে সুদও দিতে হবে।

আইনের মূল উদ্দেশ্য ও সাংবিধানিক অধিকার
সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাইকোর্টের ২০২২ সালের রায় বাতিল করে জানিয়েছে, তালাকের অধিকার সুরক্ষা আইন, ১৯৮৬-এর পরিধি এবং মূল উদ্দেশ্যই হল—বিবাহবিচ্ছেদের পরে একজন মুসলিম মহিলার মর্যাদা এবং আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য: আদালত বলেছে, এই সুরক্ষা সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের (জীবনের অধিকার) অধীনে একজন মহিলার অধিকারের সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ।

পিতৃতান্ত্রিক বৈষম্য দূরীকরণ: শীর্ষ আদালত রায় দিয়েছে, “এই আইনের গঠনে সমতা, মর্যাদা এবং মহিলাদের স্বায়ত্তশাসনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে… বিশেষত ছোট শহর এবং গ্রামীণ এলাকায় সহজাত একটা পিতৃতান্ত্রিক বৈষম্য এখনও চলে আসছে, সেই প্রেক্ষাপটে মহিলাদের অভিজ্ঞতার আলোকেই তা করা উচিত।”

বেঞ্চ স্পষ্ট করে দিয়েছে, একজন তালাকপ্রাপ্ত মুসলিম মহিলা ১৯৮৬ সালের আইনের ৩(১) ধারায় তাঁর বিয়ের সময় পিতামাতা বা পরিবারের তরফে স্বামীকে দেওয়া যৌতুক অথবা অন্যান্য সম্পত্তির ফেরৎ চাওয়ার অধিকার রাখেন। আদালত এই প্রসঙ্গে ড্যানিয়েল লতিফি বনাম ভারত সরকার (২০০১) মামলার রেফারেন্সও দিয়েছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy