ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের ‘বাবরি মসজিদ তৈরির ঘোষণা’ নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে যখন তোলপাড় চলছে, ঠিক তখনই মুর্শিদাবাদের মাটিতে দাঁড়িয়ে কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার বহরমপুরের প্রশাসনিক সভা থেকে তিনি স্পষ্ট জানান, “মুর্শিদাবাদ জেলায় দাঙ্গা মানুষ পছন্দ করে না”। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় তিনি সিরাজ-উদ-দৌল্লার ঐতিহাসিক মাটিকে সাক্ষী রেখে সর্বধর্ম সমন্বয়ের ডাক দিলেন।
দলীয় বিধায়ক সাসপেন্ড:
মুখ্যমন্ত্রীর সভার ঠিক আগেই কলকাতায় তৃণমূল ভবনে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা ফিরহাদ হাকিম এক জরুরি সাংবাদিক বৈঠকে ঘোষণা করেন—দলবিরোধী কার্যকলাপ এবং সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক মন্তব্যের জেরে হুমায়ুন কবীরকে দল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে।
হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে ফিরহাদ হাকিমের অভিযোগ:
ফিরহাদ হাকিম অভিযোগ করেন যে, হুমায়ুন কবীর আসলে বিজেপির ‘ইন্সট্রুমেন্ট’ বা দাবার বোড়ে হিসেবে কাজ করছেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “কেন বাবরি মসজিদ? নিজের বাবা-মায়ের নামে বা কোনও শহীদের নামে মসজিদ কেন করলেন না?” তিনি বলেন, বাংলায় ধর্ম যার যার, উৎসব সবার—কিন্তু হুমায়ুন কবীর এই আদর্শের বিরুদ্ধে গিয়ে ‘বিভাজনের রাজনীতি’ করার চেষ্টা করছেন। বেলডাঙার মতো সংবেদনশীল জায়গায় এই ঘোষণা করে তিনি বিজেপিকে ডিভিডেন্ড দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
মমতার ভাষণে মীরজাফর প্রসঙ্গ:
কলকাতায় যখন দল এই কঠোর অবস্থান ঘোষণা করছে, ঠিক তখনই মুর্শিদাবাদে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনীতি নিয়ে সরাসরি কথা না-বললেও, ইতিহাসের প্রসঙ্গ টেনে বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে সরব হন। তিনি পলাশীর প্রান্তরের প্রসঙ্গ টেনে সিরাজ-উদ-দৌল্লা এবং মীরজাফরের উদাহরণ দেন এবং নাম না-করে বর্তমানের দলবদলু ও বিভাজন সৃষ্টিকারী নেতাদের ‘মীরজাফর’-এর সঙ্গেই তুলনা করেন।
৬ ডিসেম্বরের আগে সম্প্রীতির বার্তা:
মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় ৬ ডিসেম্বরের (বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন) প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। তিনি মনে করিয়ে দেন, এই দিনটিকে গত ৩৩ বছর ধরে তৃণমূল কংগ্রেস ‘সম্প্রীতি দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে, কোনও প্ররোচনার দিন হিসেবে নয়।
সম্প্রীতির বার্তা দিতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন:
“আমাদের শরীরে যেমন হাত, পা, কিডনি, হার্ট—সবকিছুর প্রয়োজন, তেমনই আমাদের রাজ্যে হিন্দু, মুসলমান, শিখ, খ্রিস্টান—সবাই আছে। চোখ, নাক, কান ছাড়া যেমন শরীর চলে না, তেমনই সব ধর্মকে নিয়েই সমাজ চলে।”
তিনি স্পষ্ট বলেন, “নিয়ম তো এটাই, মেজরিটি যাঁরা আছেন তাঁরা মাইনরিটিদের রক্ষা করবেন। আর যাঁরা মাইনরিটি আছেন তাঁরা মেজরিটিদের রক্ষা করবেন। এটাই সর্বধর্ম সমন্বয়।”
ফিরহাদ হাকিমও স্পষ্ট করে দেন, প্রশাসন কোনোভাবেই রাজ্যে অরাজকতা বরদাস্ত করবে না। ভোটের আগে সমাজকে ভাগ করার এই ‘ডিভিশনাল পলিটিক্স’ তৃণমূল কংগ্রেস মেনে নেবে না। দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদনেই এই সাসপেনশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।