‘ভুল বোঝাবুঝিতেই ফৌজদারি মামলা’! বিয়ের প্রতিশ্রুতি ও ধর্ষণের অভিযোগ খারিজ করে নজির গড়ল সুপ্রিম কোর্ট

সহমতের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা প্রেমের সম্পর্ক যদি পরবর্তীকালে কোনও কারণে তিক্ততায় পৌঁছায়, তবে তাকে ‘ধর্ষণ’ হিসেবে গণ্য করা যায় না—এই মর্মে এক ঐতিহাসিক রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ওঠা ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ধর্ষণের অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে খারিজ করে দিয়েছেন বিচারপতি ভি নাগরত্না ও বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মার বেঞ্চ। আদালতের পর্যবেক্ষণ, এটি একটি দীর্ঘকালীন সম্মতিসূচক সম্পর্ক ছিল, যা বিয়ের অনিশ্চয়তার কারণে ফৌজদারি মামলার রূপ নিয়েছিল।

প্রেক্ষাপট ও আইনি লড়াই: ২০১৫ সালে সোশ্যাল মিডিয়া মারফৎ ওই যুবক ও তরুণীর পরিচয় হয়। দীর্ঘ ৬ বছর সম্পর্কে থাকার পর ২০২১ সালে তরুণী ধর্ষণের অভিযোগ আনেন। নিম্ন আদালত অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়। হাইকোর্টে জামিন না মেলায় মামলাটি শীর্ষ আদালতে পৌঁছায়। শুনানির সময় বিচারপতিদের ‘সিক্সথ সেন্স’ বা ষষ্ঠেন্দ্রিয় ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, এই যুগল আবার এক হতে পারেন।

সুপ্রিম কোর্টের মানবিক হস্তক্ষেপ: বিচাপতিরা নিজেদের চেম্বারে অভিযুক্ত, অভিযোগকারিণী এবং উভয় পরিবারের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেন। আলোচনার পর দু’পক্ষই বিবাহে সম্মত হয়। সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ অনুমোদনে জুলাই মাসে তাঁদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। বর্তমানে তাঁরা সুখী দাম্পত্য জীবন কাটাচ্ছেন জেনে আদালত সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের অধীনে বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে যাবতীয় মামলা ও সাজা বাতিল করে দেয়।

চাকরিতে পুনর্বহাল: আদালত শুধু সাজাই মকুব করেনি, বরং অভিযুক্তের মানবিক অধিকারও সুরক্ষিত করেছে। মধ্যপ্রদেশের সাগর জেলার এক সরকারি হাসপাতালে ওই ব্যক্তিকে তাঁর পুরনো চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাসপেনশনের সময়কালীন সম্পূর্ণ বেতনও তাঁকে মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। এই রায় সম্মতিসূচক সম্পর্ক ও ধর্ষণের আইনের সূক্ষ্ম সীমারেখাকে আবারও স্পষ্ট করে দিল।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy