ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ভারত প্রায় ৯০টি উন্নত রাফায়েল F4 যুদ্ধবিমান কেনার জন্য প্রস্তুত। এই চুক্তিতে পরবর্তীতে আরও ২৪টি উন্নত রাফায়েল F5 যুদ্ধবিমান কেনার বিকল্পও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফ্রান্স এটিকে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের শক্তিশালী অংশীদারিত্বের প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করেছে।
আইডিআরডব্লিউ (IDRW) রিপোর্ট অনুসারে, ফ্রান্স একটি সরকারী বিবৃতিতে বলেছে যে ভারতের ৯০টি রাফায়েল F4 এবং ২৪টি রাফায়েল F5-এর বিকল্প এই আস্থার একটি স্পষ্ট উদাহরণ।
চুক্তি স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া:
কঠিন সময়ের পর চুক্তি: ভারতীয় বিমান বাহিনীর (IAF) MRFA (মাল্টি-রোল ফাইটার এয়ারক্রাফ্ট) টেন্ডার প্রক্রিয়াটি ২০১৮ সালে শুরু হয়েছিল এবং ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।
ডাসাল্ট রাফায়েলের সুপারিশ: IAF আনুষ্ঠানিকভাবে ডাসাল্ট রাফায়েলকে সুপারিশ করে। এতে এফ-২১, ইউরোফাইটার টাইফুন এবং গ্রিপেন ই/এফ-এর মতো প্রতিযোগীদের পিছনে ফেলে রাফায়েল এগিয়ে যায়।
আলোচনা: নাগপুরে ডাসল্ট রিলায়েন্স অ্যারোস্পেসের মাধ্যমে মূল্য, অফসেট এবং স্থানীয় উৎপাদন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এগিয়ে চলেছে।
একটি প্রধান শর্ত: পুরো চুক্তিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্তের সাথে আবদ্ধ: নিরাপত্তা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি (CCS) থেকে প্রয়োজনীয়তা গ্রহণ (AoN) অনুমোদন। যেকোনো বড় প্রতিরক্ষা চুক্তির জন্য এই ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক।
ফরাসি মন্ত্রকের তাড়াহুড়ো: ফ্রান্স কর্তৃক তাড়াহুড়ো করে প্রকাশিত একটি প্রাথমিক খসড়ায় “অর্ডার” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছিল। ভারত তাৎক্ষণিকভাবে এর বিরোধিতা করে, যার ফলে ফ্রান্সকে দ্রুত সেই বিবৃতি প্রত্যাহার করতে হয়। কূটনৈতিকভাবে, এটি ইঙ্গিত দেয় যে চুক্তি প্রক্রিয়াটি এখনও সম্পূর্ণ হয়নি।
ভারতের যুদ্ধবিমান ঘাটতি: বর্তমানে ভারতীয় বিমানবাহিনীর কার্যকরী স্কোয়াড্রনের সংখ্যা মাত্র ৩০টি, যেখানে অনুমোদিত শক্তি ৪২টি। চীন এবং পাকিস্তানের বাড়তে থাকা হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে, এই যুদ্ধবিমানের ঘাটতি ভারতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।
রাফায়েল F4 এবং F5-এর বিশেষত্ব:
রাফায়েল F4: এর সরবরাহ ২০২৯ সালে শুরু হবে এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে পুরো বহরটি সম্পূর্ণরূপে কার্যকরী ক্ষমতায় পৌঁছবে। F4-তে উন্নত ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার স্যুট, উন্নত সেন্সর ফিউশন এবং Astra Mk-2 ক্ষেপণাস্ত্রের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য থাকবে।
রাফায়েল F5 (ঐচ্ছিক ২৪টি): এই গেম-চেঞ্জিং ভ্যারিয়েন্টটি বেশ কিছু অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে আসবে, যেমন:
নতুন হাই-থ্রাস্ট টি-রেক্স ইঞ্জিন।
সম্পূর্ণ নতুন মিশন কম্পিউটারের মাধ্যমে বর্ধিত অনবোর্ড কম্পিউটিং।
লয়্যাল উইংম্যান ড্রোন (নিউরো-ভিত্তিক) দিয়ে নেটওয়ার্ক অপারেশন।
স্থানীয় উৎপাদন ও মেক ইন ইন্ডিয়া: চুক্তির স্থানীয় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭০% এরও বেশি দেশীয় উপকরণ ব্যবহার করা। এর মধ্যে ভারতের তৈরি উত্তম AESA রাডার এবং রুদ্রম অ্যান্টি-রেডিয়েশন মিসাইলও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই উৎপাদন ভারতের AMCA প্রোগ্রামকেও সরাসরি শক্তিশালী করবে।
সিদ্ধান্ত এবং ভবিষ্যৎ: নতুন বছরে একটি বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। যদি সিসিএস কর্তৃক অনুমোদিত হয়, তবে এটি হবে ভারতের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বিমান বিদ্যুৎ চুক্তি। যদি সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চলে, তবে ২০২৬ সালের শুরুতেই একটি বড় ঘোষণা আসতে পারে: ফ্রান্সের পর ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাফায়েল অপারেটর হয়ে উঠবে।