ছেলেকে হারিয়েও হাতে লাঠি, পরনে সবুজ উর্দি! জঙ্গলকে হাতের তালুর মতো চেনেন আলোমতি কার্জি, কীভাবে পেলেন এই পেশা?

মারণ রোগ ক্যান্সার কেড়ে নিয়েছে তাঁর একমাত্র সন্তানকে। সেই অসহনীয় ব্যক্তিগত শোক সামলেও তিনি হাসিমুখে পর্যটকদের জলদাপাড়ার গভীর জঙ্গল ঘুরিয়ে দেখিয়ে চলেছেন। তিনি আলোমতি কার্জি—পুরুষপ্রধান এই জীবিকায় জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের একমাত্র মহিলা বন গাইড। বনের প্রতিটি রুট তাঁর কাছে হাতের তালুর মতো পরিচিত।

প্রায় ১১ বছর ধরে তিনি এই গাইডের কাজ করছেন। জানা গিয়েছে, আলোমতির এই অদম্য লড়াই এবং পেশাগত সফলতা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে সম্প্রতি আরও এক মহিলা গাইড জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে যোগ দিতে চলেছেন। গভীর জঙ্গলে জিপ সাফারি হোক বা হাতি সাফারি—ঐতিহ্যগতভাবে এই পেশায় পুরুষ বন গাইডদেরই বেশি দেখা যায়। কিন্তু আলোমতি যেন নারীদের প্রগতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। পর্যটকদের কাছেও তিনি অত্যন্ত প্রিয় বন গাইড।

জলদাপাড়া জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় আলোমতির সংসার। বাড়িতে রয়েছেন শ্বশুর-শাশুড়ি। দু’বছর আগে তিনি ক্যান্সার কেড়ে নিয়েছে তাঁর পুত্র সন্তানকে। ছেলের কথা মনে পড়লে আজও তাঁর চোখে জল আসে। তবে কাজের কথা মনে পড়তেই তিনি নিজেকে দ্রুত গুছিয়ে নেন।

গাইড হিসেবে যোগ দেওয়ার আগে আলোমতি জলদাপাড়া জঙ্গলে বৃক্ষরোপণের কাজ করতেন এবং বন দফতরের কর্মীদের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করতেন। তাঁর এই কর্মস্পৃহা দেখে তৎকালীন বন্যপ্রাণ সহায়ক বিমল দেবনাথ তাঁকে গাইডের পেশায় যুক্ত হওয়ার পরামর্শ দেন। আলোমতি রাজি হয়ে যান। ট্রেনিং শেষে তিনি পান গাইডের সবুজ ইউনিফর্ম এবং আই কার্ড, যা তাঁর পরিচিতিই বদলে দেয়।

বর্তমানে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে হাতি ও জিপ সাফারির জন্য সরকার অনুমোদিত ৪২ জন গাইড রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন আলোমতি। তিনি চারটি শিফটে পর্যটকদের গাইড করেন এবং তাঁর দিন শুরু হয় ভোর পাঁচটা থেকে। তিনি জানিয়েছেন, রোটেশন শিফটে কাজ করার কারণে কোনও কোনও দিন তিনি দু’টি ট্রিপও করেন। বাংলা, হিন্দি এবং ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী এই গাইড প্রতিদিন নিজেকে নতুন তথ্যে আপডেট করে চলেছেন।

আলোমতি জানান, জঙ্গল, পর্যটক এবং সাফারি তাঁর মন ভালো রাখার প্রধান কারণ। প্রতিদিন নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে কথা হয় এবং বন্যপ্রাণী সম্পর্কে তাঁদের জানাতে তাঁর খুবই ভালো লাগে। তিনি আরও মনে করেন, যে কোনো কাজের জন্য আত্মবিশ্বাস জরুরি এবং তিনি চান এই গাইডের পেশায় আরও মহিলারা যোগদান করুক।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy