‘কোটি কোটি’ অনুপ্রবেশকারী তত্ত্ব কি তবে ভাঁওতা? সংসদের পেশ করা সরকারি তথ্যে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে ‘লক্ষ লক্ষ’ রোহিঙ্গা ও অনুপ্রবেশকারী ঢুকে পড়ছে—দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই রাজনৈতিক দাবি কি তবে নিছকই অতিরঞ্জিত? খোদ কেন্দ্রীয় সরকারেরই পেশ করা সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান কিন্তু সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। সংসদের পেশ করা রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, গত ১১ বছরে অনুপ্রবেশের যে ছবি উঠে এসেছে, তা রাজনৈতিক মহলের দাবির চেয়ে বহুগুণ কম।

পরিসংখ্যান কী বলছে?
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সীমান্তে মোট ১৮,৮৫১ জনকে আটক করা হয়েছে। অর্থাৎ, গত এক দশকে আটকের সংখ্যা ২০ হাজারও পেরোয়নি। চলতি বছরেও এই সংখ্যাটি কয়েক হাজারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অথচ, বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক সভা থেকে দাবি তোলা হয়েছে যে, কোটি কোটি রোহিঙ্গা ও অনুপ্রবেশকারী ভারতে ঢুকে ডেমোগ্রাফি বদলে দিচ্ছে। সরকারি রিপোর্ট সেই দাবিকে কার্যত নস্যাৎ করে দিল।

সীমান্তের তুলনামূলক চিত্র
সরকারি নথি বলছে, প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সীমান্তেই আটকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। অন্যান্য সীমান্তের ছবিটা অনেকটা এরকম:

মায়ানমার সীমান্ত: আটকের সংখ্যা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম।

পাকিস্তান, নেপাল ও ভুটান সীমান্ত: অনুপ্রবেশের চেষ্টা এখানে যৎসামান্য। বিগত বছরগুলোতে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ‘অনুপ্রবেশ’ একটি জ্বলন্ত ইস্যু হলেও, সরকারি তথ্য বলছে চিত্রটা ততটা ‘ভয়াবহ’ নয় যতটা দাবি করা হয়।

রাজনৈতিক মহলে বিতর্কের ঝড়
এই রিপোর্ট সামনে আসতেই শুরু হয়েছে চাপানউতোর। বিরোধীদের প্রশ্ন—তবে কি ভোটের স্বার্থে অনুপ্রবেশ নিয়ে একটি অতিরঞ্জিত আতঙ্ক তৈরি করা হচ্ছিল? অন্যদিকে, বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, আটকের সংখ্যা এবং সফল অনুপ্রবেশের সংখ্যার মধ্যে অনেক সময় ফাঁক থেকে যায়। কিন্তু সেই ফাঁক কি কয়েক হাজার থেকে কয়েক কোটিতে পৌঁছাতে পারে? এই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নিরাপত্তা ও রাজনীতির এই ত্রিমুখী টানাপড়েনে কেন্দ্রের এই রিপোর্ট আগামীর নির্বাচনে যে শাসক ও বিরোধী উভয় পক্ষের হাতেই বড় অস্ত্র তুলে দিল, তা বলাই বাহুল্য।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy