বাংলার রাজনীতির এক বর্ণময় এবং বিতর্কিত চরিত্রের নাম হুমায়ুন কবীর। কখনো কংগ্রেস, কখনো বিজেপি, আবার কখনো তৃণমূল—একাধিক রাজনৈতিক দলের পতাকা হাতে মুর্শিদাবাদের এই নেতা বারবার শিরোনামে এসেছেন। বর্তমানে তিনি নিজের নবগঠিত দল ‘জনতা উন্নয়ন পার্টি’-র চেয়ারম্যান। রাজনীতির ময়দানে দাপিয়ে বেড়ানো এই নেতার ব্যক্তিগত জীবন এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সাধারণ মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই।
পড়াশোনায় কতদূর এগোতে পেরেছেন তিনি? রাজনীতির ময়দানে তুখোড় বক্তা হিসেবে পরিচিত হলেও হুমায়ুন কবীর কলেজের গণ্ডি স্পর্শ করতে পারেননি। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী, তিনি ২০১৩ সালে ‘ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর ওপেন স্কুল অফ মহারাষ্ট্র’ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক (HS) পাশ করেন। অর্থাৎ, পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় তিনি তাঁর স্কুল শিক্ষা সম্পূর্ণ করেছেন। ছাত্রজীবন থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি পারিবারিক ব্যবসার দিকেও তাঁর ঝোঁক ছিল প্রবল।
উত্থান ও রাজনৈতিক যাত্রা: হুমায়ুন কবীরের রাজনৈতিক জীবনের শুরু কংগ্রেসের হাত ধরে। একসময় অধীর চৌধুরীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। এমনকি ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও তাঁর মুর্শিদাবাদের বাড়িতে পা রেখেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বিজেপি এবং তৃণমূলেও যোগ দেন। তাঁর রাজনৈতিক গুরুত্ব এতটাই যে, নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়াই করেও তিনি শাসকদল তৃণমূলকে হারের স্বাদ চাখিয়েছেন।
সম্পত্তির উৎস এবং বর্তমান কর্মকাণ্ড: সম্প্রতি নিজের নতুন দল গঠনের মঞ্চে হুমায়ুন দাবি করেছেন, টাকার জন্য তাঁকে কখনো কারও কাছে মাথা নত করতে বা মিথ্যা কথা বলতে হয়নি। তিনি পেশায় একজন বড় মাপের ঠিকাদার (Contractor)। ছোটবেলা থেকেই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকায় তিনি আর্থিক দিক থেকে সম্পূর্ণ স্বাবলম্বী। বর্তমানে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় তাঁর তত্ত্বাবধানে ‘বাবরি মসজিদ’-এর আদলে এক বিশাল মসজিদের নির্মাণকাজ চলছে। এই প্রকল্পের জন্য তাঁর কাছে কোটি কোটি টাকার অনুদান এসেছে বলে জানা যায়।
বারবার দলবদল করলেও মুর্শিদাবাদের মাটিতে হুমায়ুন কবীর আজও এক অপ্রতিরোধ্য নাম। উচ্চ মাধ্যমিকের সার্টিফিকেট আর কয়েক দশকের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে এখন তিনি ‘জনতা উন্নয়ন পার্টি’-র মাধ্যমে বাংলার মসনদে কতটা প্রভাব ফেলতে পারেন, সেটাই এখন দেখার।