রোজভ্যালি চিট ফান্ড কাণ্ডে প্রতারিত আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য গঠিত এডিসি (ADC) কমিটির বিরুদ্ধে ওঠা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের ফরেনসিক অডিট নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের টালবাহানায় কলকাতা হাইকোর্ট গভীর হতাশা প্রকাশ করেছে। কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআইয়ের (CBI) পর এবার রাজ্যের অর্থ দফতরও লিখিতভাবে ফরেনসিক অডিট করতে অস্বীকার করেছে।
লোক ও পরিকাঠামো নেই, জানাল রাজ্য
রাজ্যের অর্থ দফতর মঙ্গলবার ডিভিশন বেঞ্চে লিখিতভাবে জানিয়েছে যে, তাদের কাছে এই ধরনের জটিল ফরেনসিক অডিট করার মতো প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো বা দক্ষ লোকবল নেই। আদালতের পর্যবেক্ষণ, রাজ্যের তরফে এহেন বক্তব্য “বিষয়টি খুবই হতাশাজনক।”
এরপরেও আদালত কেন্দ্রের এএসজি এসভি রাজুকে অনুরোধ করেছে, যাতে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (CAG)-এর মাধ্যমে এডিসি কমিটির ফরেনসিক অডিট করানোর জন্য অভিজ্ঞ লোক (Expert Personnel) দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে ৪ ডিসেম্বর।
আমানত ফেরৎ বন্ধ, বিস্মিত আদালত
হাইকোর্ট আরও একটি বিষয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। গত দু’মাস ধরে এডিসি কমিটি আমানতকারীদের টাকা মেটানো বন্ধ করে দিয়েছে। কমিটি তাদের রিপোর্টে এই বিষয়টি উল্লেখ করার পর আদালত বিস্ময় প্রকাশ করেছে।
ইডি-র অবস্থান ও সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ
আদালতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) জানায় যে, হাইকোর্টের দেওয়া দুটি নির্দেশ তারা সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছে। ইডি-র একটি আবেদনের দীর্ঘদিন ধরে শুনানি হচ্ছে না হাইকোর্টে, তাই তারা শীর্ষ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ইডি-র বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টে সেই স্পেশাল লিভ পিটিশন (SLP)-এর ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্ট তাদের কোনো আবেদন শুনবে না।
আর্থিক অনিয়ম ও চকোলেট গোষ্ঠীর যোগ
আমানত ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য হাইকোর্ট প্রথমে বিচারপতি দিলীপ শেঠ কমিটি গঠন করেছিল, কিন্তু পরবর্তীতে সেই কমিটির বিরুদ্ধেই আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
আগের দায়িত্ব: আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের ফরেনসিক অডিট করার দায়িত্ব প্রথমে দেওয়া হয়েছিল সেবিকে (SEBI)।
সম্পত্তি বিক্রির রিপোর্ট: রোজভ্যালির ১০টি সম্পত্তি বিক্রি সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট সেবিকে পেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এতে বলা হয়েছিল, বাজারদরের তুলনায় কত বেশি বা কম দামে সম্পত্তি বিক্রি হয়েছে, সেই হিসাব দিতে হবে।
চকোলেট গোষ্ঠীর হিসাব: আদালত সেবিকে চকোলেট গোষ্ঠী (রোজভ্যালির নাম পরিবর্তন করে গঠিত চকোলেট গ্রুপ অব হোটেলস)-এর থেকে এডিসি কমিটিকে অর্থ হস্তান্তরের হিসাবও তুলে ধরার নির্দেশ দিয়েছিল। সেবি পরবর্তীতে এই দায়িত্ব থেকে হাত গুটিয়ে নেয়। এরপর দায়ভার বর্তায় রাজ্যের অর্থ দফতরের ওপর, যারা এবার অডিট করতে অস্বীকার করল।