মশাবাহিত রোগ যেমন ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক যুগান্তকারী সমাধান নিয়ে এসেছে আইআইটি দিল্লির গবেষক দল। টেক্সটাইল অ্যান্ড ফাইবার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক জাভেদ নবিুবকশা শেখ–এর নেতৃত্বে তৈরি হয়েছে এই বিশেষ ধরনের ‘স্মার্ট ডিটারজেন্ট’, যা মশা প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করবে। এটি গুঁড়ো এবং তরল—দুই রূপেই পাওয়া যাবে।
বর্তমানে মশা নিবারণের জন্য কয়েল, লোশন, ক্রিম বা স্প্রে-এর মতো নানা উপায় থাকলেও সেগুলির কার্যকারিতা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সীমিত। বিশেষত, ত্বকে লাগানো টপিক্যাল প্রোডাক্টগুলির কার্যক্ষমতা দ্রুত হারানোর কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যায়।
এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান খুঁজতে গিয়েই গবেষক দল এই বিশেষ ডিটারজেন্ট তৈরি করেছে। অধ্যাপক শেখ জানান, এই ডিটারজেন্টগুলি সাধারণ ডিটারজেন্টের মতোই উচ্চমানের ওয়াশ-কেয়ার বৈশিষ্ট্য বজায় রাখে, কিন্তু এর বিশেষ উপাদানগুলির কারণে এটি মশা প্রতিরোধেও সক্ষম।
হ্যান্ড-ইন-কেজ পদ্ধতিতে কার্যকারিতা পরীক্ষা
একটি বাণিজ্যিক ল্যাবরেটরিতে এই ডিটারজেন্টগুলির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়েছে এক অভিনব “হ্যান্ড-ইন-কেজ” পদ্ধতির মাধ্যমে। এই পরীক্ষায় স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের ডিটারজেন্টে ধোয়া জামাকাপড় পরা হাত ক্ষুধার্ত মশায় ভরা বাক্সে ঢুকিয়েছিলেন। পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, এই ডিটারজেন্টে ধোয়া কাপড়ে মশা বসার প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
গবেষকদের দাবি, মশার সূচের মতো শুঁড় সহজেই কাপড় ভেদ করতে পারে। তাই প্রথমেই দরকার কাপড়ে মশা নামতে না দেওয়া। এই স্মার্ট ডিটারজেন্টের সক্রিয় উপাদানগুলি ধোয়ার সময় কাপড়ের তন্তুর সঙ্গে এমনভাবে যুক্ত হয় যে, জামাকাপড় মশার কাছে অনাকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। এই উপাদানগুলি মশার গন্ধ ও স্বাদ-গ্রাহক সেন্সর দুটিকেই প্রভাবিত করে।
গবেষণা দলটি ইতিমধ্যেই এই উদ্ভাবনের জন্য পেটেন্ট দাখিল করেছে। যেহেতু জামাকাপড় নিয়মিত ধোয়ার প্রয়োজন হয়, তাই প্রতিবার ধোয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই মশা প্রতিরোধী স্তর নতুন করে তৈরি হয়। ফলে এর প্রভাব স্থায়ী থাকে এবং এটি ব্যবহারে সুবিধাজনক।