পূর্ব বর্ধমানের কাঞ্চননগরের কঙ্কালেশ্বরী মন্দির ঘিরে জড়িয়ে রয়েছে নানা অলৌকিক কাহিনি। কে কবে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তা জানা না থাকলেও, প্রায় আড়াইশো বছরের পুরনো এই টেরাকোটা মন্দিরটি তার ন’টি চূড়া নিয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে।
দেবীর কঙ্কালসার রূপ ও অষ্টভূজা মূর্তি
এই মন্দিরে দেবী কালীর রূপ কঙ্কালসার। দেবীর শরীরের অস্থি, শিরা, ধমনী স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে, তাই দেবী ‘কঙ্কালেশ্বরী কালী’ নামে পরিচিত। দেবী এখানে অষ্টভূজা।
উৎপত্তি: কথিত আছে, শায়িত শিবের নাভি থেকে পদ্ম উৎপন্ন হয়েছে, আর সেই পদ্মের উপর বসে রয়েছেন দেবী।
বিগ্রহের বৈশিষ্ট্য: কালো ব্যাসল্ট পাথরে তৈরি এই বিগ্রহের উপরের ডান হাতে রয়েছে ত্রিশূল, এবং বিগ্রহের পায়ের দু’পাশে রয়েছে দু’টি শিয়াল। দেবীর চালচিত্রে রয়েছে হাতি।
পাল যুগের বিগ্রহ ও সাধক কমলানন্দের কাহিনি
প্রথমে এই মন্দিরে কোনো বিগ্রহ ছিল না। কথিত আছে, সাধক কমলানন্দ পরিব্রাজক দেবীর স্বপ্নাদেশ পান। তিনি স্বপ্নে দেখেন যে দামোদরের তীরে দেবী রয়েছেন। স্বপ্নাদেশ পেয়ে বাংলা ১৩২৩ সালে সাধক কমলানন্দ ওই পাথর উদ্ধার করেন। সেই পাথরেই খোদাই করা ছিল দেবী মূর্তি, যা পরে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
অনুমান করা হয়, এই দেবীমূর্তিটি সম্ভবত বৌদ্ধ বা পাল যুগের। অনেকে একে বৌদ্ধ চামুণ্ডার রূপ বলেও মনে করেন।
মন্দিরে মূল মূর্তির পাশেই রয়েছে আরও একটি ছোট মূর্তি। মূল মূর্তিটি উদ্ধার হওয়ার কিছুদিন পরেই অন্য আরেকটি পুকুর থেকে এটি উদ্ধার হয়েছিল। স্বপ্নদেশ পেয়ে ছোট মূর্তিটিকেও মন্দিরে নিয়ে আসা হয়। দেবী এখানে চামুণ্ডা মতে পূজিত হন।
পুজো ও ভোগ ব্যবস্থা
সারা বছরই এই মন্দিরে নিত্য পুজো হয়। দীপান্বিতা কালীপুজোর সময় বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়, সেই সময় প্রায় ১ লক্ষেরও বেশি ভক্তের সমাগম ঘটে। কালীপুজোর দুদিন ধরে চলে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ভোগের ব্যবস্থা। এছাড়াও, সারা বছরই প্রতিদিনই দুপুরে মন্দিরে ১০ টাকার বিনিময়ে অন্ন ভোগ এবং রাত্রে পাঁচ টাকার বিনিময়ে রুটি খাওয়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে।