যেখানে এসআইআর (SIR) বা বিশেষ নিবিড় সংশোধনের আতঙ্কে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চল থেকে শয়ে শয়ে অবৈধ বাংলাদেশি নাগরিকরা লোটা-কম্বল নিয়ে নিজের দেশে ফিরতে মরিয়া, সেখানে সম্পূর্ণ বিপরীত ছবি ধরা পড়ল উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট অঞ্চলে। অভিযোগ, বসিরহাটের বহু এলাকা এখন কার্যত ‘মিনি বাংলাদেশ’-এর চেহারা নিয়েছে, যেখানে বহু অনুপ্রবেশকারী দিব্যি পরিবার নিয়ে জাঁকিয়ে বসে আছেন।
সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে শুরু করে এদেশের যাবতীয় পরিচয়পত্র—আধার ও ভোটার কার্ড—সবই নাকি অসৎ উপায়ে জুটিয়ে ফেলেছেন তাঁরা। হাকিমপুর সীমান্তে যখন বাংলাদেশিদের ভিড় উপচে পড়ছে দেশে ফেরার জন্য, তখন বসিরহাটের সংগ্রামপুর-শিবাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরামনগর অঞ্চলে বহু বাংলাদেশি নিশ্চিন্তে দিন কাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ।
এদেরই একজন হলেন ৬২ বছরের নুরুল ইসলাম শেখ। অভিযোগ, তাঁর পরিবারের পাঁচ সদস্যই বাংলাদেশের নাগরিক। বছর দশেক আগে চোরাপথে এ দেশে এসে জমি কিনে বাড়ি করেছেন তিনি। ভারতীয় পুত্রবধূর নথিপত্র ব্যবহার করে পরিবারের সকলের জন্য জুটিয়েছেন ভারতের পরিচয়পত্র। SIR চালু হওয়ার পরেও তাঁর ফেরার কোনো তাড়া নেই। উল্টে টোটো চালিয়ে বুক ফুলিয়ে সংসার করছেন এবং এদেশেই পাকাপাকিভাবে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
যদিও নুরুল ইসলাম নিজে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছেন, তিনি এখানকার আদি বাসিন্দা। তাঁর পরিবারের কেউই ওপার বাংলা থেকে আসেননি এবং তাঁর কাছে ২০০১ সালের জমির দলিলও রয়েছে।
তবে স্থানীয় বিজেপি নেতা আব্দুর রউফ সরদার জোর গলায় দাবি করেছেন, নুরুল ইসলাম শেখ ও তাঁর পরিবার বাংলাদেশের নাগরিক। তিনি এও বলেন, বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে এখনও বহু বাংলাদেশি লুকিয়ে আছেন, যারা কারচুপি করে ভোটার তালিকায় নাম তুলেছেন। অন্যদিকে, স্থানীয় তৃণমূল নেতা হাবিব মণ্ডল নুরুল ইসলামকে দীর্ঘদিন ধরে জানার কথা স্বীকার করলেও, তিনি বাংলাদেশি কি না, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।
তবে শাসক ও বিরোধী, উভয় শিবিরই উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশিদের উপস্থিতির কথা স্বীকার করে নিলেও, কেউ ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে একে অপরের ঘাড়ে দায় ঠেলতেই ব্যস্ত। বসিরহাট ১ নম্বর ব্লকের বিডিও অবশ্য জানিয়েছেন, অভিযোগ খতিয়ে দেখে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অন্যদিকে, হাকিমপুর সীমান্তে BSF বায়োমেট্রিক নমুনা-সহ তথ্য যাচাই করে তবেই বাংলাদেশিদের দেশে ফেরার ছাড়পত্র দিচ্ছে।