মতুয়া সমাজ তথা বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু শরণার্থীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতে চলেছে। ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধনী বা SIR প্রক্রিয়ায় এবার বড়সড় মান্যতা পেল সিএএ (CAA) সার্টিফিকেট। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, খসড়া তালিকায় নাম না থাকলেও যদি কেউ ফর্ম-৬-এর সঙ্গে নিজের নাগরিকত্বের শংসাপত্র (CAA Certificate) পেশ করতে পারেন, তবে তাঁর নাম চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে মতুয়া মহলে আনন্দের জোয়ার বইলেও, বিরোধীরা একে ‘নীরব এনআরসি’ (NRC) বলে কটাক্ষ করতে শুরু করেছে।
মতুয়াদের রক্ষাকবচ: তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই রাজ্যে প্রায় ৭০ হাজার শরণার্থী সিএএ সার্টিফিকেট হাতে পেয়েছেন। বর্তমানে ভোটার তালিকায় নাম সংশোধন বা অন্তর্ভুক্তির জন্য যে শুনানি চলছে, তাতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই মতুয়া সম্প্রদায়ের। নাগরিকত্ব প্রমাণের ক্ষেত্রে এই শংসাপত্রকে বৈধ নথি হিসেবে গ্রহণ করায় এখন থেকে তাঁদের ভোটাধিকার শতভাগ নিশ্চিত হলো। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ফর্ম-৬ জমা দিলে সরাসরি চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পাবেন।
ডি-ফ্যাক্টো এনআরসি বিতর্ক: রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, এই প্রক্রিয়াটি আসলে বাংলায় এক ধরনের ‘ডি-ফ্যাক্টো এনআরসি’ হিসেবে কাজ করছে। একদিকে সিএএ-র মাধ্যমে হিন্দু শরণার্থীরা নাগরিকত্ব ও ভোটাধিকার সুরক্ষিত করতে পারছেন, অন্যদিকে যাঁদের কাছে বৈধ নথি নেই, তাঁদের নাম তালিকা থেকে চিরতরে বাদ যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, নির্বাচনের আগে এটি ভোটার ছাঁটাইয়ের এক সুকৌশলী পদ্ধতি।
প্রশাসনের দাবি: যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাফ জানানো হয়েছে, এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ আইনসম্মত এবং নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা মেনেই করা হচ্ছে। এটি কোনওভাবেই এনআরসি নয়, বরং ভোটার তালিকা হালনাগাদের একটি নিয়মিত অংশ মাত্র। মতুয়া নেতৃত্বের দাবি, “দীর্ঘদিন পর আমরা সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পাচ্ছি, এই স্বস্তি আমাদের প্রাপ্য ছিল।” ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে নাগরিকত্বের এই নতুন সমীকরণ বাংলার রাজনীতিতে যে ‘গেম চেঞ্জার’ হতে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য।