‘IMF-এর শর্তে’ ২৩ ডিসেম্বরেই নিলামে PIA! কেন বিক্রি হচ্ছে পাকিস্তানের গর্ব?

পাকিস্তানের জাতীয় বিমান সংস্থা পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (PIA) অবশেষে নিলামে উঠতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ নিশ্চিত করেছেন, আইএমএফের আর্থিক সহায়তার শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে ২০২৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর পিআইএ-র ৫১% থেকে ১০০% শেয়ার বিক্রির বিডিং প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রক্রিয়া সকল মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। দীর্ঘদিন ধরে ঋণ ও অনুদানের উপর নির্ভরশীল পাকিস্তানকে ‘ফিসকাল প্রুডেন্স’-এর পথে ফেরাতেই আইএমএফ এই বেসরকারিকরণের শর্ত দিয়েছে।

💵 IMF-এর প্রধান শর্ত ও পাকিস্তানের লক্ষ্যমাত্রা:

পিআইএ-র এই বেসরকারিকরণ গত দুই দশকে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় উদ্যোগ। এটি আইএমএফের $৭ বিলিয়ন আর্থিক প্যাকেজের অন্যতম প্রধান শর্ত। পাকিস্তানের বেসরকারিকরণ মন্ত্রী মুহম্মদ আলি রয়টার্সকে জানিয়েছেন, চলতি বছর বেসরকারিকরণ থেকে তাদের লক্ষ্যমাত্রা ৮৬ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি। তিনি আরও জানান, “পিআইএ-র শেষ বিডিং-এ ১৫% অর্থ সরকারের কাছে যেত, বাকিটা কোম্পানির কাছেই থাকত।”

📌 নিলামে ৪টি প্রি-কোয়ালিফাইড সংস্থা:

পিআইএ বিক্রির জন্য চারটি সংস্থা প্রাক-যোগ্যতা অর্জন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে: ১. লাকি সিমেন্ট কনসোর্টিয়াম (Lucky Cement Consortium) ২. আরিফ হাবিব কর্পোরেশন কনসোর্টিয়াম (Arif Habib Corporation Consortium) ৩. এয়ার ব্লু লিমিটেড (Air Blue Limited) ৪. ফৌজি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (Fauji Fertiliser Company Limited)

বিশেষভাবে লক্ষণীয়, ফৌজি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড সামরিক-নিয়ন্ত্রিত ফৌজি ফাউন্ডেশন-এর অংশ, যা দেশের অর্থনীতিতে সামরিক বাহিনীর ব্যাপক প্রভাবকে স্পষ্ট করে।

✈️ কেন এই করুণ দশা PIA-র?

পিআইএ-র এই বেহাল দশার পেছনে বহু বছরের আর্থিক অব্যবস্থা এবং পদ্ধতিগত ব্যর্থতার ধারাবাহিক শৃঙ্খল কাজ করেছে:

পাইলট কেলেঙ্কারি ও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা: ২০২০ সালে প্রকাশিত হয় যে ৩০% এরও বেশি পাকিস্তানি পাইলট ভুয়া লাইসেন্স নিয়ে বিমান চালাচ্ছিলেন। এর ফলে ২৬২ জন পাইলটকে গ্রাউন্ডেড করতে হয়। এই কেলেঙ্কারির জেরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র পিআইএ-র রুটে উড়ানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যা শত শত কোটি রুপি আয়ের পথ বন্ধ করে দেয় এবং বিশ্বব্যাপী সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ও অব্যবস্থা: বছরের পর বছর ধরে চলা অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ, রাজনৈতিক নিয়োগ এবং চরম স্বজনপ্রীতি বিমান সংস্থাটিকে শিল্প মানদণ্ডের তুলনায় অনেক বড় কর্মী বাহিনীতে পরিণত করে। বর্তমানে সংস্থাটির আর্থিক ক্ষতি পিকেআর ২০০ বিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে।

নিরাপত্তা ত্রুটি: ২০২০ সালে পিআইএ ফ্লাইট ৮৩০৩-এর ভয়াবহ দুর্ঘটনাটিই পাইলট-লাইসেন্স তদন্ত শুরু করতে বাধ্য করে, যার ফলে ব্যয়বহুল ফ্লিট মেরামত ও গ্রাউন্ডিংয়ের কারণে নগদ অর্থের তীব্র অভাব দেখা দেয়।

বিশ্লেষকদের মতে, পিআইএ-র পতন কেবল একটি বিমান সংস্থার ব্যর্থতা নয়, বরং এটি ইসলামিক প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ পদ্ধতিগত সমস্যার প্রতিফলন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy