32 হাজার শিক্ষকের চাকরি থাকবে না যাবে? রায় ঘোষণার আগেই জানুন মামলাকারীদের ৫ বিস্ফোরক যুক্তি

কলকাতা হাইকোর্টে আজ, বুধবার, 2016 সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা হতে চলেছে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক বেনিয়মের অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মামলাকারীরা। দীর্ঘ দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই মামলার শুনানি শেষে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ আজ বহু প্রতীক্ষিত রায় দেবে।

এর আগে, চলতি বছরেই দুর্নীতির অভিযোগে এসএসসি’র 2016 সালের পুরো প্যানেল বাতিল হয়েছে। সেই আবহে এই রায় আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ।

কেন এই অভিযোগ? রইল সওয়াল-জবাবের মূল অংশ:

2014 সালের টেট পরীক্ষার ভিত্তিতে 2016 সালে প্রায় 42 হাজার 942 জন শিক্ষক নিয়োগ করেছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। নিয়োগে একাধিক ত্রুটি ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রিয়ঙ্কা নস্কর-সহ প্রায় 140 জন প্রার্থী হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।

মামলাকারীদের বিস্ফোরক অভিযোগ:
অ্যাপটিটিউড টেস্টে গরমিল: নিয়ম মেনে অ্যাপটিটিউড টেস্ট (Aptitude Test) নেওয়া হয়নি।

প্রশিক্ষণ ছাড়াই নিয়োগ: প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে।

সংরক্ষণ নীতির লঙ্ঘন: সংরক্ষণের তালিকা যথাযথভাবে মানা হয়নি।

প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি: আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে সওয়াল করেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য পর্ষদ এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানিকে যে দায়িত্ব দিয়েছিল, তার রুল বা সিলেকশন কমিটির গঠন নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। এই নিয়োগ সম্পূর্ণভাবেই ‘প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি’।

নিয়ম লঙ্ঘন: রাজ্যের বিজ্ঞপ্তি জারির সময় প্রশিক্ষণহীনদের ছাড় দেওয়ার নির্দেশ না থাকা সত্ত্বেও তাঁদের নিয়োগ করা হয়েছে। এটি টাকার বিনিময়ে সুযোগ দেওয়ার ইঙ্গিতবাহী।

প্যানেল পুনর্গঠনের দাবি:
মামলাকারী পক্ষের আরেক আইনজীবী সৌম্য মজুমদার দাবি করেন, “32 হাজারের চাকরি বাতিল নাও হতে পারে, তবে 42 হাজারের প্যানেল পুনর্গঠন করা হোক।” তিনি যুক্তি দেন, অ্যাপটিটিউড টেস্টের জন্য বরাদ্দ 5 নম্বরই প্রশিক্ষিত ও প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের মধ্যে বড় পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে। হয় সবার 5 নম্বর দেওয়া হোক, অথবা সবার পাঁচ নম্বর বাদ দেওয়া হোক।

রাজ্য ও পর্ষদের পাল্টা যুক্তি:
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত আদালতে দাবি করেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কিছু ভুল-ত্রুটি থাকা আর দুর্নীতি এক জিনিস নয়। দুর্নীতির অভিযোগ ‘কাল্পনিক’।

43 হাজার শিক্ষকের মধ্যে মাত্র 94 জনের চাকরি বাতিল হয়েছিল টেট উত্তীর্ণ না হওয়ার কারণে, যা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হচ্ছে। এর সঙ্গে 32 হাজার কর্মরত শিক্ষকের কোনো যোগ নেই।

সিবিআই তদন্তেও মাত্র 360 জনকে খুঁজে পাওয়া গেছে, যাঁদের প্রশিক্ষণ নেই।

আদালতের আজকের রায়ের দিকে তাকিয়ে আছেন 32 হাজার শিক্ষক ও তাঁদের পরিবার।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy