১০০ দিনের দিন শেষ! ১২৫ দিনের কাজের গ্যারান্টি দিয়ে নয়া আইনের ঘোষণা, জানুন কী আছে ‘ভিবি-গ্রামজি’ বিলে

গ্রামীণ ভারতের অর্থনীতির ভোল বদলে দিতে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিল কেন্দ্র। রাষ্ট্রপতি সম্প্রতি ‘বিকশিত ভারত গ্যারান্টি ফর রোজগার অ্যান্ড আজীবিকা মিশন (গ্রামীণ) আইন, ২০২৫’-এ সম্মতি দিয়েছেন। এই নতুন আইনের ফলে গ্রামীণ এলাকায় কর্মপ্রার্থীদের কাজের সময়সীমা ১০০ দিন থেকে বাড়িয়ে ১২৫ দিন করা নিশ্চিত হলো। এই বিধিবদ্ধ গ্যারান্টি দরিদ্র মানুষের ক্ষমতায়ন এবং আত্মনির্ভর গ্রামীণ ভারত নির্মাণের দিশায় এক বড় মাইলফলক।

বিভ্রান্তি বনাম বাস্তবতা: নতুন ‘ভিবি-গ্রামজি’ (VB-GramG) আইন নিয়ে কয়েকটি মহল থেকে দাবি করা হচ্ছে যে, এতে কাজের অধিকার খর্ব হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে যে, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কর্মপ্রার্থীদের অধিকার কেবল অটুটই নেই, বরং তা আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগেকার ব্যবস্থায় বেকার ভাতা বা কাজের দাবিতে যে প্রশাসনিক গড়িমসি ছিল, নতুন আইনে তা দূর করে দ্রুত অভিযোগ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। কর্মীদের চাহিদা অনুযায়ী কাজ দেওয়া হবে না বলে যে কথা রটেছে, তা ভুল। বরং অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনার মাধ্যমে কর্মীরা যখনই কাজ চাইবেন, তা যাতে তৎক্ষণাৎ পূরণ হয়, তার আগাম প্রস্তুতি রাখা হবে।

বিকেন্দ্রীকরণ ও গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতা: অনেকে মনে করছেন কেন্দ্র সবকিছু ওপর থেকে চাপিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু আইনের কাঠামো বলছে অন্য কথা। পরিকল্পনা তৈরি এবং রূপায়ণের মূল চাবিকাঠি থাকছে গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতেই। গ্রামসভাই সেই পরিকল্পনায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে। নতুনত্ব হলো, এখন থেকে এই পরিকল্পনাগুলি ব্লক, জেলা ও জাতীয় স্তরে সংযুক্ত থাকবে, যার ফলে কাজের সমন্বয় বৃদ্ধি পাবে এবং কোনো বিচ্ছিন্ন কর্মকাণ্ড হবে না।

বরাদ্দ ও সাফল্যের খতিয়ান: পরিসংখ্যান বলছে, বিগত এক দশকে গ্রামীণ কর্মসংস্থানে বরাদ্দ ও সাফল্য দুই-ই অভাবনীয়ভাবে বেড়েছে। ২০১৩-১৪ সালে যেখানে বাজেট বরাদ্দ ছিল মাত্র ৩৩,০০০ কোটি টাকা, ২০২৪-২৫ সালে তা দাঁড়িয়েছে ২,৮৬,০০০ কোটি টাকায়। কর্মদিবস তৈরির সংখ্যা ১,৬৬০ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ৩,২১০ কোটি। বিশেষ করে মহিলাদের অংশগ্রহণের হার ৪৮% থেকে বেড়ে ৫৬.৭৩% হয়েছে, যা নারী ক্ষমতায়নের বড় প্রমাণ।

ইউপিএ জমানার ব্যর্থতা: নতুন আইনের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অতীতের খতিয়ান তুলে ধরে জানানো হয়েছে যে, ইউপিএ জমানায় মজুরি ১০০ টাকায় বেঁধে রাখা হয়েছিল এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতায় এমজিনারেগা প্রকল্পে ভুয়ো জব কার্ড ও দুর্নীতির পাহাড় জমেছিল। ২০১৩-র ক্যাগ (CAG) রিপোর্ট অনুযায়ী, সে সময় ৪.৩৩ লক্ষের বেশি জাল কার্ড ছিল এবং বিপুল অর্থ তছরুপ হয়েছিল। সেই অদক্ষ কাঠামো ভেঙে বর্তমান সরকার এক আধুনিক ও স্বচ্ছ কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্পের সূচনা করেছে।

এই নতুন আইন কেবল জীবিকার নিশ্চয়তাই দেবে না, বরং গ্রামে স্থায়ী পরিকাঠামো নির্মাণ এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে উন্নয়ন ও মানবকল্যাণকে একই সুতোয় বাঁধবে। এটি ধ্বংসাত্মক নয়, বরং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এক শক্তিশালী পুনর্নবীকরণ।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy