অশান্ত বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ইঙ্গিত ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ২০২৪-এর অগাস্টে গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর মনে করা হয়েছিল দলটির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। কিন্তু মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে ঢাকার রাজনৈতিক অলিন্দে শুরু হয়েছে নতুন চিত্রনাট্য লেখা। বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ও তাঁর দল আওয়ামী লীগের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা এখন আর কেবল জল্পনা নয়, বরং জোরালো এক বাস্তবতায় পরিণত হতে চলেছে।
বাংলাদেশে পরিস্থিতির মোড় ঘুরতে শুরু করে হাসিনার কট্টর বিরোধী হিসেবে পরিচিত ওসমান হাদির মৃত্যুর পর। তাঁর প্রয়াণের পর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া নজিরবিহীন হিংসা, অগ্নিকাণ্ড ও অরাজকতা সামলাতে কার্যত হিমশিম খেতে হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন ইউনূস সরকারকে। এই অস্থিতিশীল পরিবেশের মধ্যেই আওয়ামী লীগের পুনরুত্থানের পথ প্রশস্ত হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো বিরোধী দলগুলোর সুরবদল। একসময় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে সরব হওয়া দলগুলো এখন নমনীয়। এনসিপি প্রধান নাহিদ ইসলাম স্পষ্ট জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা বা তাঁর দল নির্বাচনে অংশ নিলে তাঁদের কোনো আপত্তি নেই। এমনকি খালেদা জিয়ার দল বিএনপি-র অন্দরেও একই সুর শোনা যাচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, চরমপন্থার উত্থান রুখতে এবং স্থিতিশীলতা ফেরাতে আওয়ামী লীগকে মূলধারার রাজনীতিতে রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে বিরোধীরা।
এদিকে, চরমপন্থী এবং প্রভাবশালী ইসলামি দলগুলোর মধ্যে ছড়িয়েছে তীব্র আতঙ্ক। জামায়াতে ইসলামীর আমির থেকে শুরু করে বিএনপি সভাপতি—সকলেই নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের বন্দুকের লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা বাংলাদেশের সংসদীয় ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ও উদ্বেগজনক পদক্ষেপ।
আন্তর্জাতিক মহলও এখন ঢাকার দিকে কড়া নজর রাখছে। আমেরিকা, রাশিয়া ও চিন—তিন পরাশক্তিই বাংলাদেশে একটি অবাধ ও ‘সর্বজনীন’ নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে, যেখানে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। বর্তমানে আওয়ামী লীগের সঙ্গে দীর্ঘদিনের মিত্র ১৪টি দল নতুন করে জোটবদ্ধ হয়ে সক্রিয় হচ্ছে। বাংলাদেশের ৩০০ আসনের সংসদে সরকার গড়তে প্রয়োজন ১৫১টি আসন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান অরাজক পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সুসংগঠিত জনশক্তিই আগামী দিনে বাংলাদেশের ক্ষমতার তখত বদলে দেওয়ার প্রধান কারিগর হয়ে উঠতে পারে।