রাজ্যে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ চলার মধ্যেই হঠাৎ নজরদারি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিল নির্বাচন কমিশন (Election Commission)। এক দিকে যেমন পর্যবেক্ষক দল এসে বিভিন্ন এলাকা খতিয়ে দেখছেন এবং ERO (Electoral Registration Officer) ও BLO-দের (Booth Level Officer) প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিচ্ছেন, ঠিক তেমনই একই সময়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের তিন অফিসার গোপনে কলকাতায় এসে পৌঁছেছেন। আশ্চর্যজনকভাবে, তাঁদের গতিবিধি সম্পর্কে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের (সিইও) দপ্তর কোনো খবর জানে না।
বেলেঘাটায় গোপন সফর, ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি কথা
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বুধবার এই তিন অফিসার কলকাতার বেলেঘাটা এলাকায় আচমকা ঘুরে বেড়ান। তাঁরা সরাসরি ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে কথা বলেন এবং ভোটার তালিকা সংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজখবর নেন। প্রয়োজন হলে তাঁরা ভোটারদের কাছ থেকে এনুমারেশন ফর্ম বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথিও চাইতে পারেন বলে খবর। কমিশনের এই তিন সদস্য বৃহস্পতিবার কোথায় যাবেন, সে বিষয়েও সিইও দপ্তর সম্পূর্ণ অন্ধকারে।
হঠাৎ BLO-দের জরুরি মিটিং, জল্পনা তুঙ্গে
বৃহস্পতিবারই আবার রাজ্যের সমস্ত BLO-দের নিয়ে ERO-দের বৈঠক করার কথা ছিল। তবে ঠিক এই সময়েই নির্বাচন কমিশন রাজ্যজুড়ে হঠাৎ BLO-দের জরুরি মিটিং ডাকায় নতুন করে জল্পনা তৈরি হয়েছে।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি বিশেষ নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সুব্রত গুপ্তের সঙ্গে কথা বলার পর তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত ‘আইপ্যাক’ (I-PAC)-কে কাঠগড়ায় তুলেছে। বিজেপি এবং সিপিএমের অভিযোগ, ভোটার তালিকার ডাটা এন্ট্রির কাজ কারা করছে, কীভাবে করানো হচ্ছে—সবটাই অন্ধকারে রাখা হয়েছে। তাঁদের জোরালো দাবি, ডাটা এন্ট্রি প্রক্রিয়াকে প্রকাশ্যে আনা হোক।
ভোটার তালিকা সংশোধনের পরিসংখ্যান নিয়ে সন্দেহ
বুধবার পর্যন্ত কমিশনের দেওয়া পরিসংখ্যান রাজ্যের সংশোধনের কাজ ঘিরে আরও সন্দেহ বাড়িয়েছে। সামনে আসা তথ্যগুলি উদ্বেগজনক:
ফর্ম ফেরত আসেনি: ৫০ লক্ষ
মৃত ভোটার: ২২ লক্ষ
স্থানান্তরিত ভোটার: ১৭.৫ লক্ষ
নিখোঁজ ভোটার: ৪ লক্ষ
ডুপ্লিকেট ভোটার: ১.২ লক্ষ
নির্বাচনের আগে কমিশনের এই অস্বাভাবিক তৎপরতা, উচ্চপদস্থ পর্যবেক্ষকদের গোপন মোতায়েন এবং বিতর্কিত পরিসংখ্যান—সব মিলিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।