১০০ দিনের কাজের বকেয়া সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রীয় সরকারের ধাক্কা খাওয়ার ঠিক পরদিনই তীব্র আক্রমণ শানাল রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। মঙ্গলবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত বন প্রতিমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা এবং সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল। তাঁরা অভিযোগ করেন, বিজেপি-নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলার দরিদ্র মানুষের ন্যায্য মজুরি আটকে রেখে চরম রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চালাচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এবং তৃণমূলের তোপ
উল্লেখ্য, সোমবার সুপ্রিম কোর্ট দ্রুত পশ্চিমবঙ্গে ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি, হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী রাজ্যে দ্রুত কাজ শুরুর নির্দেশও বহাল রাখা হয়। তৃণমূল কংগ্রেস এই রায়কে বাংলার মানুষের জয় বলে স্বাগত জানিয়েছে এবং এই ইস্যুতেই বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করেছে।
সাংবাদিক বৈঠকে মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, “বাংলার গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বদলে বিজেপি সরকার স্পষ্ট বাংলা-বিরোধী মানসিকতা দেখিয়েছে। জুলাই মাসের শেষে কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টে গেল শুধুমাত্র ১ আগস্টের ডেডলাইন অতিক্রম না-করার জন্য। এটাই প্রমাণ যে, তারা চায় না বাংলার মানুষ তাঁদের প্রাপ্য মজুরি পান।”
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার গুরুতর অভিযোগ
প্রদীপ মজুমদার কেন্দ্রের পক্ষপাতমূলক আচরণের প্রমাণ দিতে গিয়ে পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি জানান, বাংলায় মাত্র ৬.০৩ কোটি টাকা নিয়ে ‘অসামঞ্জস্য’-এর অজুহাতে তিন বছর ধরে মজুরি আটকে রাখা হয়েছে। অথচ, “গুজরাটে ৭১ কোটি, উত্তরপ্রদেশে ৪৯ কোটি, বিহারে ১৭.৭৬ কোটি এবং মহারাষ্ট্রে ১৫.২০ কোটি টাকা অপব্যবহার হওয়া সত্ত্বেও সেখানে কেন্দ্র কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি।” তিনি বলেন, “এটা চরম রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।”
মন্ত্রী আরও জোর দিয়ে বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট বলেছে— হাইকোর্টের রায়ে হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। আদালতও দেখেছে কেন্দ্র আইন ভেঙে বাংলাকে বঞ্চিত করেছে। আমরা কারও দয়া চাই না, আমরা আইনসিদ্ধ অধিকার দাবি করছি।”
‘এই রায় বাংলার মানুষের বিজয়, জবাব মিলবে ২০২৬-এ’
সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল বলেন, “এই রায় বাংলার মানুষের বিজয়। বিজেপি বাংলায় বারবার ভোটে হারার বদলা নিয়েছে গরিব মানুষের উপর।” তিনি দিল্লিতে তৃণমূল প্রতিনিধি দলের অপমানের কথাও উল্লেখ করেন এবং বলেন, “মানুষ ২০২৬ সালে এর জবাব দেবে।”
প্রতিমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা বলেন, “কেন্দ্র ভেবেছিল ট্রেন-বাস বন্ধ করলে আন্দোলন থেমে যাবে। কিন্তু মানুষের পথ কেউ বন্ধ করতে পারে না। বিজেপি ধনীদের সরকার। গরিবের চোখের জল তারা বোঝে না।” তিনি দাবি করেন, জঙ্গলমহল, আদিবাসী গ্রাম ও কৃষিশ্রমিকরা এই বঞ্চনার শিকার।
শেষে প্রদীপ মজুমদার বলেন, “এটা শুধু টাকার লড়াই নয় – সম্মানের লড়াই। বাংলার ২.৫৮ কোটি জব কার্ডধারীর অধিকারের লড়াই। কেন্দ্র অবিলম্বে বকেয়া টাকা মুক্ত করুক। না-হলে ২০২৬ সালে মানুষই বিচার করবে।”